কবি মহসিন খোন্দকারের ‘ব্যথার বঙ্গানুবাদ’ কবিতাগ্রন্থের পাঠ-আলোচনা অনুষ্ঠান

দিনটা শনিবার, ১০ মে ২০২৫। ‘বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, নরসিংদী’ কর্তৃক আয়োজিত হয় ‘মহসিন খোন্দকারের কবিতাগ্রন্থ ব্যথার বঙ্গানুবাদ-এর পাঠ-পরাপাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। নবধারা প্রি-স্কুল প্রাঙ্গণে বিকেল ৩ টা ৩০ মিনিটে আরম্ভ হয় অনুষ্ঠানটি। উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা কবি-লেখক-সংস্কৃতিকর্মী এবং সাহিত্যপ্রেমীরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রগতি লেখক সংঘের সহ-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সনেট। কবি মহসিন খোন্দকার রচিত ‘ব্যথার বঙ্গানুবাদ’ কাব্যের যুক্তিনিষ্ঠ পক্ষ-বিপক্ষের বাক-বিতণ্ডায় অনুষ্ঠানটি মুখরিত ছিলো। গ্রন্থটির কাব্যভাবনা, বিষয়, ভাষা, ছন্দসহ কবিতার মৌলিক ব্যাকরণিক বিষয়-আশয় চমৎকার বাকচাতুর্য দ্বারা তুলে ধরেন আলোচকগণ। আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর বিশিষ্ট শিক্ষক, লেখক ও গবেষক প্রফেসর কালাম মাহমুদ, কবি ও সম্পাদক মমিন আফ্রাদ, কবি ও সম্পাদক শাহীন সোহান, কবি হাসনাইন হীরা, এক্টিভিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক নাজমুল আলম সোহাগ এবং কবি ও ঔপন্যাসিক মনোয়ারা স্মৃতি। কাব্যগ্রন্থকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকের ধারাবাহিক আলোচনায় অনুষ্ঠানটি প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে ওঠে।

লেখক ও গবেষক প্রফেসর কালাম মাহমুদ বলেন, “যা অনুভব, তা-ই কবিতা। কবি মহসিন খোন্দকার আঞ্চলিক ভাষার কবি। তার কবিতার জগত চমৎকার, শব্দবিন্যাস, বয়ানভঙ্গি অসাধারণ। সংকেত, উপমা, নতুন শব্দ প্রয়োগ ও সৌন্দর্য সৃষ্টিতে কাব্যখানি সার্থক হয়েছে।”

আলোচনা করছেন লেখক ও গবেষক প্রফেসর কালাম মাহমুদ | ছবি : রাজিব ভূঁইয়া

গ্রন্থের কবিতাগুলোর মৌলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন সম্পাদক ও কবি শাহীন সোহান। তিনি বলেন, “এটি বিষয়, শব্দ, বাক্য, ভাষাভঙ্গি, রূপক, চিত্রকল্পে ঠাসা প্রেমের কাব্যগ্রন্থ। তবে কবিতার এতো সরল বাক্য আমার কাছে সুখকর মনে হয়নি।”

আলোচনার পর আলোচনায় চলে কাব্যের রসবোধ ও প্রকৃত নির্যাস। কবি মমিন আফ্রাদ বলেন, “প্রচুর ব্যক্তিগত প্রতীক ব্যবহার করেছেন কবি। যেমন : ভি-কাট রাত, চোখ ভর্তি জোনাকি, তিন ফর্মার আকাশ, ভাববিস্কুট, ফুলফুর্তির ফনেটিকস, মাখন মুহূর্ত, সাইকো সাফিক্স ও বয়সের তিরতিরানি তো আছেই।”

আরেকজন আলোচক কবি ও ঔপন্যাসিক মনোয়ারা স্মৃতি বলেন, “প্রতিটি কবিতা গূঢ় রসায়নে তাৎপর্যপূর্ণ। কাব্যের স্বকীয়তা হলো শব্দচয়নে। ‘ব্যথার বঙ্গানুবাদ’ একটি সমৃদ্ধ-সার্থক কবিতাগ্রন্থ।”

কবি হাসনাইন হীরা গ্রন্থটির শিল্পমান বিচার করতে গিয়ে সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরাণের গহীন ভেতর’ ও আল মাহমুদের ‘সোনালী কাবিন’ কাব্যের সাথে তুলনা করে আলোচনা করেন। তিনি আরো বলেন, “আমার কাছে কাব্যের সবগুলো কবিতা একটি কবিতা মনে হয়েছে।”

কথা বলছেন কবি হাসনাইন হীরা | ছবি : রাজিব ভূঁইয়া

শিক্ষক, এক্টিভিস্ট ও সংস্কৃতিকর্মী নাজমুল আলম সোহাগ বলেন, “কবিতা কিছু শব্দ, কিছু চিত্রকল্পের গভীর উপলব্ধিবোধ। মহসিন খোন্দকারের নতুনত্ব, উচ্ছ্বাস-প্রবণতা, ছেলেমানুষি আমার মুগ্ধতার জায়গা। তিনি নিরন্তর লিখে যাবেন, এই আশা রাখি।”

এছাড়া চিত্রশিল্পী সাদেক মুকুল, সাবেক শিক্ষা অফিসার ও কলামিস্ট নূরুদ্দীন দরজী, লেখক নূরুল ইসলাম নূরচান, লেখক নূরজাহান বেগমসহ আরো অনেকে তাদের মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। আলোচনা অনুষ্ঠানটি আরো প্রাণবন্ত হয় কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে। আলোচকদের আলোচনার ফাঁকে ‘ব্যথার বঙ্গানুবাদ’ গ্রন্থ থেকে ‘ভাববিস্কুট’, ‘আমাকে সরানো এতো সহজ না’ এবং ‘রঙিন রাতের ঠোঁট’ কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার রওনক জাহান মুন ও কারিমা পুষ্পিতা।

অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয় ‘প্রগতি লেখক সংঘ, নরসিংদী’ এবং এই অনুষ্ঠানের সভাপতি সুমন ইউসুফের বুদ্ধিদীপ্ত ও চিন্তাশীল আলোচনায়।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ