নরসিংদী জেলা কৃষক আন্দোলনের তীর্থভূমি। এখানে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে অনেক বড়ো বড়ো কৃষক আন্দোলন হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন জাতীয় এবং স্থানীয় নেতারা। তবে নরসিংদীতে সর্বপ্রথম কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলো কমিউনিস্ট পার্টি। তারপর ভাসানী ন্যাপ ও মোজাফ্ফর ন্যাপের কৃষক সংগঠনগুলো শক্ত অবস্থান তৈরি করে। তাদের কৃষক আন্দোলনের ফলে নরসিংদীতে অনেক কিংবদন্তীতুল্য কৃষকনেতার জন্ম হয়। এতো বিপুল পরিমাণ কৃষকনেতা অন্যত্র দেখা যায় না। একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে সবচে’ বেশি কৃষক সম্মেলন হয়েছে নরসিংদী জেলায়। মূলত আন্দোলনকারী কৃষকনেতাদের মূল্যায়নের জন্যেই এখানে কেন্দ্রীয় সম্মেলন বেশি হয়েছে, যা ইতিহাসে স্থান করে আছে।
নরসিংদী জেলার সবচেয়ে আলোচিত কৃষক আন্দোলন ও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিলো রায়পুরা থানার রহিমাবাবদ ও আদিয়াবাদ গ্রামে। ব্রিটিশ আমলে অনুষ্ঠিত এ-ঘটনার পর জেলার বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী কৃষক সমিতি, কৃষক সভা কিংবা কৃষক সংগঠন গড়ে ওঠে। আন্দামান ফেরত বিপ্লবী সতীশ পাকড়াশী, জিতেন ঘোষ, হাতেম আলী খান, বিপ্লবী রহমান মাস্টার, কমরেড আবদুল হাই, শামসুল হক ভূঁইয়া ওরফে মাহতাব মাস্টার, ফয়েজ মাস্টার, অন্নদা পাল, তারা মাস্টার ও ফজলুল হক খোন্দকারের নেতৃত্বে কৃষকেরা সংগঠিত হয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, যার সাথে দেশের বামপন্থী প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি জড়িত ছিলো। তাঁদের মধ্যে আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন অন্যতম। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৬৪ সালে রায়পুরা বাজারে (শ্রীরামপুর বাজার) কৃষক সম্মেলন হয়েছিলো। দুইদিনব্যাপী এ-সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হাতেম আলী খান। প্রধান অতিথি ছিলেন মওলানা ভাসানী।
১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় কৃষক সমিতির প্রতিনিধি সম্মেলন। এতে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে একটি জেলা কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি নির্বাচিত হন জিতেন ঘোষ। কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন কাজী জহিরুল হক। সহ-সভাপতি হন ফিরোজ আল মোজাহিদ। দ্বিতীয় সহ-সভাপতি আবদুল খালেক। তৃতীয় সহ-সভাপতি মানিক মিয়া। সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক। সহ-সম্পাদক আবদুল হাই ও হানিফ খান। সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা। সদস্য হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের নাম পাওয়া যায় না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, রায়পুরা কৃষক সমিতির নেতৃবৃন্দ এই সম্মেলন সফল করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। শ্রীরামপুর বাজারটি ছিলো রায়পুরা থানার একটি বৃহৎ ও প্রাচীন হাট। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকেরা উক্ত হাটে এসে বেচাকেনা করতেন। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য ও হাট ইজারাদারদের খাজনা কমানোর জন্যে স্থানীয় কৃষকনেতারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন। তাই ১৯৬৪ সালের কৃষক সম্মেলন তাদের কাছে উৎসব হিসেবে দেখা দেয়। জাতীয় কৃষকনেতাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে উক্ত হাটে কয়েকটি তোরণ সাজানো হয়েছিলো। এর মধ্যে প্রধান সড়কের প্রবেশপথে বড়ো করে একটি তোরণ নির্মাণ করে সেটার নামকরণ করা হয়েছিলো ‘বিপ্লবী রহমান মাস্টার তোরণ’।
প্রতিনিধি সম্মেলনের পরদিন, ১৬ এপ্রিল ১৯৬৪, শ্রীরামপুর বাজারে বিশাল জনসভা হয়। জনসভার মূল আকর্ষণ ছিলো মওলানা ভাসানীর ভাষণ। ভাষণে তিনি কালিশিয়ায় পুলিশী নির্যাতন ও নিত্য পণ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে বলেন, “আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, হাইকোর্টের ব্যারিস্টার, উকিল, মোক্তার, ডাক্তার, দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত কারো ভোটের অধিকার নেই। ভোটের অধিকার আছে কেবল মুষ্টিমেয় কতিপয় বুনিয়াদী গণতন্ত্রীর। জনগণ কখনোই অধিকারহীন অবস্থা মেনে নিবে না। সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের জনগণ নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “কায়দে আজম ও বড়লাট হওয়ার পর স্বীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ পরিত্যাগ করে সবার প্রতি সমব্যবহারের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিলেন। অথচ আজকে গভর্নর এবং অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য এমন অধিকার এবং উৎসাহ দান করা হচ্ছে, ব্রিটিশ আমলেও এর নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির পর ১৯৬৫ সালে রায়পুরার (বর্তমানে বেলাব উপজেলাধীন) আমলাব গ্রামে একটি কৃষক সমাবেশ হয়েছিলো। মূলত বেলাব বাজারে ইজারাদার বিরোধী আন্দোলনে সফলতা অর্জনের ঘটনার পরই আমলাব ইউনিয়নে এ-সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশ কৃষক সমিতি উক্ত সভার শুরুতে তাদের জয়ের কথা সগর্বে ঘোষণা করে। আব্দুল হাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বেলাব বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের চেষ্টা না করার ঘোষণা দেয়া হয়। ইজারাদার চেয়ারম্যান নিজ মুখে তা ঘোষণা দিয়ে কৃষক সমিতিতে যোগদান করেন। তিনি কৃষক সমিতির ৯ দফা মেনে নেন।
৯ দফার উল্লেখযোগ্য দফা
ক. ইউনিয়নের যেকোনো কাজ করার পূর্বে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে মৌলিক গণতন্ত্রী সদস্য ছাড়াও প্রতি গ্রাম থেকে অন্তত তিনজন করে কৃষককর্মী নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
খ. কোনো সরকারি সাহায্য পাওয়া গেলেই জনগণকে তা অবহিত করতে হবে এবং উক্ত সাহায্য বণ্টনের ব্যাপারে ওয়ার্ডের মৌলিক গণতন্ত্রী সদস্য ছাড়াও তিনজন কৃষককর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গ. যারা গরীব ও দিনমজুর, তাদের সবরকম খাজনা ও ট্যাক্স বাতিল করতে হবে।
ঘ. প্রতি বছর শেষে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনসভা করে বছরের সবরকম উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কার্যবিবরণী পেশ করবেন।
এখানে উল্লেখ্য, মৌলিক গণতন্ত্রী ছিলো মার্শাল আইয়ুব খানের প্রবর্তিত গ্রাম সংগঠন, গ্রাম সরকার বা গ্রাম পঞ্চায়েত ধরনের। দেশের অধিকাংশ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা মৌলিক গণতন্ত্রী ছিলেন।
আমলাব কৃষক সভায় পাকিস্তানের উপর ভারতীয় হামলার নিন্দা করা হয়। রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি করা হয় সমাবেশে। সমাবেশে জাতিসংঘ, মেন্টো ও সিয়াটো বর্জনের ডাক দেয়া হয়। বেলাব হাট ইজারাদার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে ১৯৬৬ সালে ‘জনতা’ পত্রিকা একটি প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনটি নিম্নরূপ :
“রায়পুরার বেলাব বাজারের জনসাধারণ কিছুকাল ধরে হরতাল করে আসছিলেন ইজারাদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। ইজারাদারদের অত্যাচার, কৃষক জনসাধারণের খাজনা, ট্যাক্স, কৃষি ধান, কৃষি দ্রব্যের মূল্য, হাট বাজারে খাজনা তোলা প্রভৃতি বহুবিধ সমস্যার সমাধানের দাবীতে এ এলাকায় জনসাধারণ সুদীর্ঘ দেড়মাস যাবৎ হরতাল পালন করেন। এ সময় ধরে বেলাব হাট বন্ধ ছিল। এ ব্যাপারে কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাতেম আলী খান একটি বিবৃতি দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত হাট কর্তৃপক্ষ কৃষক সমিতির ন্যায্য দাবী মেনে নিয়েছিল। বাজার কমিটি এবং সাধারণ কৃষকদের পক্ষ থেকে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়। উক্ত লিখিত চুক্তিতে বলা হয়, অতঃপর বেলাব বাজারের ইজারাদাররা প্রত্যেক ভিন্ন ভিন্ন মহলের জন্য সরকার নির্ধারিত খাজনার চার্ট বোর্ড আকারে বাজারের গলিতে গলিতে টাঙিয়ে দেবে এবং ছাপা রশিদ দিয়ে খাজনা আদায় করবে। গৃহস্থের কাঁচামাল বিক্রয়ের উপর তোলা বা খাজনা ধরা হবে না। বাজারে যে কোন জিনিসের দালালী বাজার কমিটির নির্ধারিত হারে প্রচলিত থাকবে। বাজারের উপর থেকে যেকোন ধরনের চাঁদা বাজার কমিটি ব্যতিত আদায় করা যাবে না। যেকোন মহলের টাকা প্রতি এক আনা হারে খাজনা ধার্য্য ছিল, তার হার কমানোর জন্য বাজার কমিটি সরকারের প্রতি আবেদন জানাবে।”
এ-ধরনের চুক্তি তখন নজিরবিহীন ঘটনা। শুধুমাত্র কৃষকনেতা ও কৃষকদের জোরালো আন্দোলনেই সম্ভব হয়েছিলো। ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ৩০ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বর্ধিত সভা আহ্বান করে। হাজী মোহাম্মদ দানেশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী ২৯ ও ৩০ মার্চ রায়পুরা থানার অন্তর্গত শিবপুরে (প্রকৃতপক্ষে স্থানটির নাম জংলী শিবপুর বাজার) প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত বাজারটি কৃষিপণ্য তথা সবজির বাজার হিসেবে বিখ্যাত। সপ্তাহে শত শত ট্রাক সবজি বেচাকেনা হয়।

কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে ১২ ও ১৩ এপ্রিল কৃষক সমিতির পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক তার প্রতিবেদনে দেশের কৃষি ও কৃষকের সমস্যার সার্বিক দিক তুলে ধরে বলেন, “১৯৫১ সালের জমিদারী দখল আইনে জমিদারদের জন্য প্রচুর খেসারতের ব্যবস্থা করে এবং পরিবার প্রতি ১০০ বিঘা পর্যন্ত খাস জমি জমিদার জোতদার শ্রেণীর হাতে রাখার সুযোগ দিয়ে বাকি উদ্বৃত্ত জমি সরকারি দখলে আনার ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া ঐ আইনে লুপ্ত প্রায় নানকার প্রথার অবসান করা হয় এবং ঠানুয়া খাজনার বদলে টাকার খাজনা চালু করার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে সবচেয়ে ব্যাপক যে সামন্তবাদী শোষণ প্রথা বর্গপ্রথা, তার আসান বা বর্গাচাষীর সামান্যতম তেভাগার দাবীও ঐ আইনে স্বীকৃত হয়নি।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, “এ আইন কার্যকরী করার ক্ষেত্রেও তদানীন্তন মুসলিম লীগ সরকার টালবাহানা করেন। ১৯৫৫ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় এবং পরবর্তীকালে ১৯৫৭-৫৮ সালে তা কার্যকরী করার ব্যবস্থা শুরু হয়। কিন্তু ঐ সময়ে পূর্ব পাকিস্তান জোতদার শ্রেণী বাধা প্রদানের ফলে তা সম্পূর্ণভাবে কার্যকরী করা যায়নি।”
সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টে আরো বলা হয়, “আমাদের নিজস্ব কোন জমি নেই। যারা পরের জমিতে প্রজা হিসাবে চাষাবাদ করে, তাদের মধ্যে শতকরা ১৪ জনের জমির খাজনাই বা বর্গাজমির পরিমাণ আধা একরেরও কম। শতকরা ৬১ জনের জমির পরিমাণ ২.৫ একরের কম এবং শতকরা ৮৯ জনের জমির পরিমাণ ৫ একরের কম।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, “জমিদারী আমলে ছোট ছোট খালবিল, জলমহাল ও নদী বন্দোবস্ত দেওয়া হতো না। সাধারণ মানুষ এগুলো ব্যবহার করতো। বর্তমানে এসব জমি সরকারের হাতে যাওয়ার পর তা সাধারণ মানুষের পরিবর্তে ইজারাদারদের কাছে বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে। সরকার হাটবাজারগুলো একইভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ায় সাধারণ মানুষ ইজারাদার কর্তৃক শোষণ নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।”
জংলী শিবপুর বাজারে অনুষ্ঠিত কৃষক সমাবেশে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, “বিগত কালের মধ্যে কৃষক সমিতির নেতৃত্বে যেসব আন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে আমলাব ইউনিয়ন কৃষক আন্দোলন ও বেলাব হাট ইজারাদার বিরোধী আন্দোলন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। উপরোক্ত দু’টি আন্দোলনেই রায়পুরা থানার কৃষক সমিতির নেতৃত্বে দলমত নির্বিশেষে সব কৃষককে এবং স্থানীয় এ রকম বিরাট সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। এরূপ বিরাট সাফল্যের ফলেই সমগ্র এলাকা জুড়ে কৃষক সমিতির প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাংগঠনিক শক্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সাংগঠনিক শক্তির বিবরণ দিতে গিয়ে ১৬ টি জেলার সদস্য সংখ্যা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ৩০০০, বগুড়া ২০০, দিনাজপুর ২০০০, রংপুর ৫০০০, রাজশাহী ২০০০, খুলনা ৩০০০, যশোর ৩০০০, কুষ্টিয়া ২০০, বরিশাল ১০০০, ফরিদপুর ৩০০, ঢাকা ১০০০০, কুমিল্লা ১০০০, নোয়াখালী ২০০০, চট্টগ্রাম ২০০০, পাবনা ৬০০০ ও সিলেট ১০০০০।
পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলনে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিটি নিম্নরূপ :
সভাপতি
আবদুল হামিদ খান ভাসানী
সহ-সভাপতি
হাজী মোহাম্মদ দানেশ
মুন্সী মোদাচ্ছের আলী
অমূল্য লাহিড়ী
আলী সরদার খান
আলতাব আলী
সাধারণ সম্পাদক
হাতেম আলী খান
সহ-সাধারণ সম্পাদক
আবদুল হক
শামসুল হক
কোষাধ্যক্ষ
আহমেদুল কবীর মনু মিয়া
সাংগঠনিক সম্পাদক
জিতেন ঘোষ

জংলী শিবপুর হাটে অনুষ্ঠিত কৃষক সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সেখানে কৃষক সমিতির ঘোষণাপত্রের চতুর্থ পৃষ্ঠার শেষ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করা হয় :
“পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি হবে দলমত, সম্প্রদায়, ধর্ম, স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের সব কৃষক শ্রেণীর একটি গণপ্রতিষ্ঠান। পূর্ব পাকিস্তানের কৃষকদের এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হবে এ প্রদেশের ভূমি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সামন্তবাদী শোষণ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অবসান করে খোদ চাষীর হাতে জমি প্রদান এবং কৃষকদের উপর থেকে সাম্রাজ্যবাদী, ধনবাদী ও অন্যান্য সর্বপ্রকার শোষণের অবসান করে দেশে একটি গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা। সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সঠিক মুক্তি সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্ভবপর বলে কৃষক সমিতি মনে করে। উপরোক্ত উদ্দেশ্যগুলো হাসিল করার জন্য এ প্রতিষ্ঠান সব কৃষককে সংগঠিত করবে এবং শান্তিপূর্ণ প্রথায় আন্দোলন ও কর্ম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।”
জংলী শিবপুর হাটে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলন ছিলো তৎসময়ের সবচেয়ে বৃহৎ কৃষক সমাবেশ। স্থানীয় বাড়িঘর ছাড়াও হাজার হাজার অস্থায়ী শামিয়ানা ও তাবু তৈরি করে আগত অতিথি এবং কৃষকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তাদের খাওয়া-দাওয়ার জন্যে স্থানীয় কৃষকেরা স্বতস্ফূর্তভাবে ক্ষেতের শাক-সবজি ও চাল-ডাল প্রদান করেছিলেন।
সে-সময় কৃষক আন্দোলনে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ১৯৬৭ সালের ৫ মার্চ ঢাকা জেলা কৃষক সমিতির উদ্যোগে ঢাকায় এক বিশাল সমাবেশের ডাক দেয়। উক্ত সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্যে নরসিংদী জেলায় রায়পুরা, বেলাব, শিবপুর, মনোহরদী, সদর থানা থেকে প্রায় এক লক্ষ কৃষকের বিরাট মিছিল ঢাকার দিকে রওনা দেয়। ৪ মার্চ রাতে মিছিলটি নরসিংদী-ঢাকা সড়কের বাবুরহাটের কাছে আসলে পুলিশ সেই মিছিলে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শত শত কৃষক আহত হয়। এ-ঘটনার পর কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাতেম আলী খান এক বিবৃতিতে বলেন, “পুলিশী হামলার নিন্দা করার ভাষা নেই। বর্তমানে দেশের মেহনতি মানুষ দুর্ভিক্ষাবস্থার সম্মুখীন। দেশের মানুষের উপর স্বৈরাচারী শাসনের অকথ্য জুলুম নেমে এসেছে।”
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, হয়তো দেশে সর্বদলীয় সরকার গঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয়। তখন কৃষক সমিতি অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলো। তখন কৃষকনেতারা নতুন করে কৃষক সমিতি গঠনের উপর গুরুত্ব দেন। সমিতি পুনর্গঠনের জন্যে কৃষকনেতা জিতেন ঘোষ, হাতেম আলী খান, ফজলুল হক খোন্দকার, শামসুল হক, অমূল্য লাহিড়ী, নূরুল ইসলাম, মহিউদ্দিন আহমেদ, আলতাব আলী, আজিজুল ইসলাম, আবদুস সামাদ, এবাদাত উল্লাহ, সুনীল রায়, নূর রহমান, মিয়া সিরাজুল হক ও মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন আহ্বানের ঘোষণা করেন।
‘একতা’ পত্রিকা এ-সম্মেলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, “১৯৭২ সালের ২০, ২১ ও ২২ মার্চ তিনদিনব্যাপী সম্মেলন হবে রায়পুরা থানার বেলাব বাজারে। তখন বেলাব উপজেলা হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে এটাই প্রথম কৃষক সম্মেলন। এ সম্মেলন কৃষক সমাজের মধ্যে নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে এ সম্মেলনের জাতীয় রূপ ফুটে ওঠেছে। সারাদেশ থেকে ১০০০ প্রতিনিধি ও কাউন্সিলর এ সম্মেলনে অংশ নেবে। সম্মেলন উপলক্ষে কৃষক র্যালী, প্রচারের লিফলেট বিতরণ করা হবে। লক্ষাধিক কৃষক বেলাব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মান প্রভৃতি সমাজতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধিদেরকে এ সম্মেলনে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
‘ঢাকা জেলার কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণায় নিখিল ভারত কৃষক সম্মেলনের পর সর্ববৃহৎ কৃষক সমাবেশ ছিলো বেলাব বাজারে। ১৯৭২ সালের ২০ মার্চ রাজশাহী বাদে দেশের প্রতিটি জেলার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট যোগদান করেন। ভারত থেকে ভবানী সেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল বেলাব বাজারে উপস্থিত হন। পূর্ব জার্মান কৃষক দলের সভাপতি অনিস্ট উলফের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে আসেন।
সম্মেলনের শুরুতে হাতেম আলী খান, মণি সিংহ ও আবদুস সাত্তারকে নিয়ে সম্মেলন পরিচালনার জন্যে একটি সভাপতিমণ্ডলী গঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কৃষক ও কৃষক সংগঠনের অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বক্তারা সেই প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করেন। ২১ মার্চ দুপুরে প্রতিনিধি সম্মেলন শেষ হয়। তখন গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিটি হলো :
সভাপতি
কমরেড মণি সিংহ
সহ-সভাপতি
আবদুস সাত্তার
জিতেন ঘোষ
কাজী মাওলানা মহতাব খান
নলিনী দাস
আলতাব আলী
সম্পাদক
হাতেম আলী খান
সহ-সম্পাদক
ফজলুল হক খোন্দকার
নূরু রহমান
সাংগঠনিক সম্পাদক
আবদুল মোমেন
প্রচার সম্পাদক
শহীদুল্লাহ বাহার
দপ্তর সম্পাদক
শফিকুর রহমান মিলন
কোষাধ্যক্ষ
ডা. মনীন্দ্রনাথ গোস্বামী
সদস্যবৃন্দ
আবদুস সালাম
খোকা রায়
পীর
হাবিবুর রহমান, মতিয়া চৌধুরী, জ্ঞান চক্রবর্ত্তী, নূরুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, শামসুল হক, গুরুদাস তালুকদার, অমূল্য লাহিড়ী, আবদুল হাই, আজিজুর রহমান, মোকলেছুর রহমান, ডা. রবিউল হক, মির্জা আনোয়ারুল ইসলাম, ডা. আব্দুল মালেক, আমিনুল ইসলাম বাদশা, মীর শহীদ মণ্ডল, আবদুল লতিফ, জিতেন দত্ত, সয়ের উদ্দিন, মো. মুসা, ধীরেন দাস, সাহেব উল্লাহ, মির্জা আবদুল হাই, আবদুস সামাদ, আবুল হাফেজ, তারা মিয়া, আবুল হাশেম, সন্তোষ ব্যানার্জী, আবদুস সবুর ও মোসলেম উদ্দিন।
বেলাব সম্মেলনে বিশাল জনসভা হয় ২২ মার্চ। বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিলসহ প্রায় লক্ষাধিক কৃষক হাজির হয় সেখানে। পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে মঞ্চ, শামিয়ানা ও তাবু নির্মাণ করে সম্মেলনটি হয়েছিলো। সম্মেলনের একনিষ্ঠ কর্মী কৃষকনেতা বাবর আলী মাস্টার মৃত্যুর আগে আমাকে জানান, এ সম্মেলন বেলাবতে উৎসবে পরিণত হয়েছিলো। বাংলাদেশে এতো কৃষকের সমাবেশ আর হয়েছে কি না, তা জানা নেই। সম্মেলনটি সফল করার জন্যে কৃষক সমিতির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিলো।
সম্মেলনে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন, আর্থিক উন্নতি ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিলো। প্রস্তাবগুলো নিম্নরূপ :
১. একমাত্র কৃষকেরা জমির মালিক হবে। এ-নীতির ভিত্তিতে জমির মালিকানা নির্ধারণ করতে হবে।
২. মাথাপিছু ৫ বিঘা ও পরিবারপিছু ৫০ বিঘার বেশি জমি কেউ রাখতে পারবে না। এ-নিয়ম কার্যকর করার জন্যে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩. জমির উচ্চসীমা নির্ধারণ করার ফলে যে-জমি পাওয়া যাবে, তা গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বণ্টন করতে হবে।
৪. সরকারি খাসজমি গরীব ও ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
৫. জমি বণ্টনের পর কৃষকেরা যাতে সেই জমি চাষাবাদ করতে পারে, সে-ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
৬. কৃষকদের সমবায় প্রথায় চাষাবাদ করতে উৎসাহিত করতে হবে।
৭. বর্গাজমি থেকে বর্গাচাষিদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। সেলামি আদায় বন্ধ করতে হবে।
৮. বর্গাচাষের সাধারণ নিয়ম হিসেবে আধির বদলে বর্গাচাষিকে দুই-তৃতীয়াংশ দেয়ার আইন করতে হবে। যদি জমির মালিক চাষের সমস্ত খরচ যথা হাল, বলদ, সার, বীজের খরচ বহন করে, তাহলে মালিক অর্ধেক পাবে।
৯. ক্ষেতমজুরদের বাঁচার মতো মজুরি দিতে হবে।
১০. তাদের কর্মসংস্থানের জন্যে গ্রামাঞ্চলে কল-কারখানা স্থাপন করতে হবে। ক্ষেতমজুরদের কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। টেস্ট রিলিফের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. কর্মসংস্থানের কোনো স্থায়ী ব্যবস্থার পূর্বে ক্ষেতমজুরদের বেকার ভাতা দিতে হবে। সংশোধিত রেশনিংয়ের মাধ্যমে তাদের খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
১২. হাট ইজারা, জল ইজারা ও ঘাট ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে।
উক্ত সম্মেলনে জলমহাল বন্দোবস্ত নিয়ে বিশেষ প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। তাছাড়া কৃষক সমিতি নিয়ে ভাসানী ন্যাপের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে বলা হয়, অতীতে মওলানা ভাসানী কৃষক আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক কর্মসূচি দিতেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর সেটা দেখা যায় না। একই সঙ্গে আবদুল হকের মতো কৃষকনেতারা ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলে যাওয়ায় কৃষক আন্দোলনে অনেকটা ভাটা পড়ে। তাই এর অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্যে বেলাব সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নরসিংদী জেলার মধ্যে প্রাদেশিক, ঢাকা জেলা ও থানাভিত্তিক অনেক কৃষক সমাবেশ বা সম্মেলন হয়েছে। এর কোনোটা তিনদিন, কোনোটা দুইদিন, আবার কোনোটা একদিনব্যাপী হয়েছে। এর মধ্যে রায়পুরার শ্রীরামপুর বাজার, রায়পুরার জংলী শিবপুর বাজার, বেলাবর আমলাব ইউনিয়ন এবং বেলাব বাজার সম্মেলন অন্যতম। বিভিন্ন কৃষকনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, এসব বড়ো বড়ো সম্মেলন ও সমাবেশ ছাড়াও নরসিংদীর কয়েকটি এলাকায় কিছু কৃষক সমাবেশ হয়েছিলো। তবে এসব সমাবেশের বিবরণ কিংবা তথ্য কোথাও পাওয়া যায় না। গবেষকেরাও এর বিবরণ লিখেননি। এ-বিষয়ে রায়পুরা-বেলাবর প্রধান কৃষকনেতা আবদুল খালেক মাস্টার (৮০) জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে দিনক্ষণ ভুলে গেলেও স্মরণ হচ্ছে, ষাটের দশকে শিবপুরের নোয়াদিয়া গ্রামে কৃষক সমাবেশ হয়েছিলো। তৎসময় নোয়াদিয়া, খৈশাখালী ও পুটিয়া এলাকায় সফিউদ্দিন ওরফে সফি কেরানীর নেতৃত্বে শক্তিশালী কৃষক সমিতি গড়ে ওঠেছিলো। ১৯৬৪ সালে স্থানীয় দাঙ্গা ও পুটিয়া বাজারে ইজারাদার বিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ায় সেখানে একটি কৃষক সমাবেশ হয়েছিলো। কিন্তু এ-সমাবেশ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা নেই। একইভাবে শিবপুর সমাবেশের কথা জানা গেলেও এর নির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত কোথাও পাওয়া যায় না। তবে ১৯৬৮ সালে হাতিরদিয়ার হাট হরতাল আন্দোলন করতে গিয়ে ৪ জন শহীদ হওয়ায় সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মওলানা ভাসানী বক্তব্য রেখেছিলেন।
১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নরসিংদী শহরে কৃষক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। ১৮, ১৯ ও ২০ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় দ্বি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সর্বত্র সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হয়। সম্মেলনকে সফল করার জন্যে থানা পর্যায়ে সভা-সমিতির সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠে। কিংবদন্তীতুল্য নেতা মণি সিংহ নরসিংদী মহকুমার বিভিন্ন স্থানে ভাষণ দিতে থাকেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে কৃষক সমিতি প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে পারেনি, যার কারণে সমিতি অনেকটা নির্জীব হয়ে পড়েছিলো। তাই নেতৃবৃন্দ নরসিংদীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনকে বেশ গুরুত্ব দেয়। সমিতির ভবিষ্যত এ-সম্মেলনের উপর নির্ভর করবে, এই মনোভাব নিয়ে তারা কাজ করতে থাকেন। ১৮ মে সম্মেলন শুরু হয় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। উত্তোলন করেন সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম। অপরদিকে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক খোন্দকার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ, মোহাম্মদ ফরহাদ, আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম সাজেদা চৌধুরী, চৌধুরী হারুনুর রশীদ, কৃষক লীগ নেতা রহমত আলী, ছাত্র ইউনিয়নের কাজী আকরাম হোসেন ও সম্মেলন অভ্যর্থনা উপ-পরিষদের আহ্বায়ক এম ইউ ভূঁইয়া।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আবদুস সালাম। ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এই জাতীয় সম্মেলনে দুই শতাধিক প্রতিনিধি যোগদান করেন। সভায় বলা হয়, দেশ আজ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে। দেশের প্রায় ৭৮ লক্ষ মানুষ ঘরবাড়িহীন ছিন্নমূল, ৭০ লক্ষ লোক শিক্ষিত ও আধাশিক্ষিত বেকার। ১৯৭২ সালে যেখানে দেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ছিলো শতকরা ৩৭ জন, আজ সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ জনে। কৃষকদের শুধু সার, বীজ ও কীটনাশক ঔষধ সমস্যা নিয়ে লড়াই করলে চলবে না। সাথে সাথে পুরোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে আমূল পরিবর্তনের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সম্মেলনে মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, “বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার আট বছর পার হওয়ার পর আজো লাখ লাখ মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে ভুগছে। বর্তমান সরকার ধনিক শ্রেণীর সরকার। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিলাসদ্রব্য আমদানী করছে। অথচ কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কোন পর্যবেক্ষণ নেই সরকারের।”
বেগম সাজেদা চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধু দেশের কৃষক সমাজকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করেন এবং দেশের অগ্রগতির লক্ষ্যে জাতীয়করণ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কুচক্রীমহল বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেয়নি।”
মতিয়া চৌধুরী বলেন, “দেশের দুর্ভিক্ষ শুধু আপতকালীন সমস্যা নয়। আধপেটা অনাহারী দিন যাপন করছে বছরের পর বছর এদেশের বেশিরভাগ কৃষক। আওয়ামী লীগ দলীয় জোতদার প্রতিনিধিদের চাপে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭৪ সালে পরিবারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যার ফলে ১০০ বিঘা সিলিং-এর কার্যকারিতা ভণ্ডুল হয়ে যায়।”
তিনদিনব্যাপী এ-সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলে তার উপর ৪০ জন আলোচনা করেন। তাছাড়া তারা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। নেয়া হয় কিছু প্রস্তাব। শেষদিন ছিলো বিশাল সমাবেশ। সেই জনসমুদ্রে প্রস্তাবগুলো পাঠ করা হয়, গৃহীত প্রস্তাবগুলো হলো :
১. দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, পাবনা, জামালপুরসহ অন্যান্য দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজমান জেলাগুলোকে দুর্ভিক্ষ এলাকা ঘোষণা করা। দুর্ভিক্ষ এলাকায় অবিলম্বে সরকারি কর্মসূচি (কাজের বিনিময়ে খাদ্য), টেস্ট রিলিফ ও রিলিফের ব্যবস্থা করা। যেখানে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে অবিলম্বে সরকার থেকে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা এবং লঙ্গরখানা খোলা।
২. বাজারে চাল, গমের দাম যাতে বৃদ্ধি পেতে না পারে, তার জন্য সরকার থেকে মার্কেটিং অপারেশনের ব্যবস্থা করা।
৩. চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ করার জন্য মজুদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা।
৪. গ্রামাঞ্চলে গরীব, ভূমিহীন ও ক্ষেতমজুরদের সন্তানদের নিয়মিত রেশন ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা। শহরের ধনীদের রেশন বন্ধ করে দিয়ে গ্রাম ও শহরের গরীবদের পূর্ণ রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫. গরীবরা যাতে পরবর্তী ফসল করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিঋণ, সার, বীজ ইত্যাদি সরকারের কাছ থেকে সরবরাহ করা। যাদের হাল নেই, তাদের হালের গরু ক্রয়ের জন্য সরকার থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য প্রদান করা।
৬. গরীব কৃষকদের যাতে অভাবের তাড়নায় জমি বা হালের গরু বিক্রি করতে না হয়, তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা।
৭. পরিবার প্রতি জমির সিলিং ১০০ বিঘার স্থলে দু’ফসলা জমি ৫০ বিঘা, এক ফসলা জমি ৭৫ বিঘা ধার্য্য করা। উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের কাছে বিনামূল্যে বিতরণ করা।
৮. চরের জমি বিনামূল্যে স্থানীয় ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে সমবায়ে যোগদানের শর্তে বিলি-বণ্টন করা। উক্ত সমবায় সংস্থাকে সরকারিভাবে সর্বপ্রকার সাহায্য প্রদান করা।
৯. যেসব খাসজমি ধনীদের দখলে রয়েছে, তা ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া।
২০ মে সম্মেলনের শেষদিন নরসিংদী কলেজ মাঠে হাজার হাজার কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ সমবেত হন। উক্ত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সফিউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কমিউনিস্ট ও কৃষকনেতা মণি সিংহ, আবদুস সালাম, ফজলুল হক খোন্দকার, জিতেন দত্ত, গুরুদাস তালুকদার, অনিমা সিংহ, মতিয়া চৌধুরী, আবদুস সাত্তার ও নূহ-উল-আলম লেনিন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে আবদুস সালাম ও ফজলুল হক খোন্দকার। তারপর তারা একটি যৌথ বিবৃতি দেন। ১৮-২৪ জুলাই কৃষকদের দাবি সপ্তাহ ঘোষণা দিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সরকারের এই ভ্রান্ত কৃষিনীতির কারণে দেশে খাদ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি চরম সংকটে নিপতিত। সার, কীটনাশক, তেল-সাবানের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পাম্প ও গভীর নলকূপের ভাড়া বহুগুণ বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে পাটসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষকরা সবসময় বঞ্চিত হচ্ছে। রংপুরসহ দেশের কয়েকটি জেলায় দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। এক মুঠো খাবারের আশায় তারা শহরে ভীড় জমাচ্ছে। তাদের দুর্দশার অন্ত নেই। এমতাবস্থায় কৃষককূলকে রক্ষার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকদের সমবেতভাবে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের লক্ষ্যে দাবি সপ্তাহকে সফল করার আহ্বান জানানো হলো।”
২৫ জুলাই কৃষক সমিতির নতুন কমিটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেই সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭২ সালে নরসিংদীর শিবপুরে একটি ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলন হয়েছিলো। তৎকালীন কৃষকনেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সেই কৃষক সম্মেলনে মওলানা ভাসানী দু’দিন দুটি জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে লক্ষাধিক কৃষক-জনতা উপস্থিত হয়েছিলেন। শুধু শিবপুর নয়, আশেপাশে জয়দেবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা, ভৈরব, বেলাব, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে দল বেঁধে কৃষক-জনতা সেখানে হাজির হয়েছিলো। সেটা স্মরণকালে বৃহৎ একটি কৃষক সম্মেলন ছিলো।
এই কৃষক আন্দোলনকে সফল করার জন্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। মওলানা ভাসানীর ‘হক কথা’ পত্রিকায় উক্ত সম্মেলন নিয়ে একাধিক সংবাদও প্রকাশ পায়। ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের সন্তোষে এক জরুরি সভায় মওলানা ভাসানীর আহ্বানে কৃষকনেতারা মিলিত হন। উক্ত সভায় শিবপুরে কৃষক সমিতির কমিটিগুলো পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার প্রেক্ষিতে শিবপুরের কৃষকনেতারা শিবপুর থানা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম সমিতি পর্যন্ত পুনর্গঠন করেন। বাংলাদেশের আর কোথাও কৃষক সমিতির এতো ব্যাপক তৎপরতার ঘটনা জানা যায়নি।
২৯ ফেব্রুয়ারি চক্রধা ইউনিয়ন কৃষক সমিতির কর্মীরা শিবপুর বাজারে মিলিত হন। এতে সভাপতিত্ব করেন সামসুদ্দিন আহমদ। সভায় বক্তৃতা করেন কৃষকনেতা আবুল হারিছ রিকাবদার, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকার সভাপতি আবদুল মান্নান খান, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ সদস্য তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। সভায় এমদাদ হোসেন ভূঞাকে সভাপতি ও নায়েব আলী ফকিরকে সাধারণ সম্পাদক করে চক্রধা ইউনিয়ন কৃষক সমিতি গঠন করা হয়।
১ মার্চ ধানুয়া স্কুল মাঠে এক সভায় নূরুদ্দীন ভূঞাকে সভাপতি ও আবদুল বাতেনকে সাধারণ সম্পাদক করে মাছিমপুর ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, আবুল হারিছ রিকাবদার, তোফাজ্জল হোসেন বক্তব্য রাখেন। ৬ মার্চ গঠিত হয় বাঘাব ইউনিয়ন কমিটি। সভাপতি নির্বাচিত হন ভিকচান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল বাতেন গাজী। ৪ মার্চ গঠিত হয় দুলালপুর ইউনিয়ন কমিটি, সিরাজউদ্দিন আহমেদ সভাপতি ও নাসির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে। ৫ মার্চ হিজলিয়া গ্রামে এক কৃষকসভায় সিরাজ মিঞাকে সভাপতি ও ডা. মো. শফিউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একই দিনে সকালে যোশর বাজারে আবদুর রহমানকে সভাপতি ও সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি করা হয়।
এসব সভায় ১১ টি প্রস্তাবনা আনা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কৃষকদের ঋণ মওকুফ, মহাজনী ইজারাদারী ও সুদখুরী প্রথা বাতিল, শিবপুর ও যোশরে মরা নদী খনন, নরসিংদী থেকে চালাকচর, শিবপুর থেকে লাখপুর, চরসিন্দুর, যোশর ও বেলাব রাস্তাসহ অন্যান্য রাস্তা সংস্কার, শিক্ষকদের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ৯ মাস বকেয়া বেতন প্রদান, শহীদ আসাদ কলেজের সরকারি অনুদান বৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-কাপড় প্রভৃতির উর্ধ্বমূল্য রোধ প্রভৃতি। উক্ত প্রস্তাবনাগুলোতে কেন্দ্রীয় কৃষকনেতা হিসেবে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া স্বাক্ষর করেন।
২৯ ও ৩০ এপ্রিল স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম কৃষক সম্মেলন হয় শিবপুরে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মওলানা ভাসানী। দুইদিনব্যাপী সম্মেলনে তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন, একমাত্র বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রই নিপীড়িত-অত্যাচারিত কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। উক্ত সম্মেলনে ভারতের দুজন বিখ্যাত কৃষকনেতা অংশগ্রহণ করেছিলেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা মোজাফ্ফর আহমেদের একটি বাণী সম্মেলনে পাঠ করা হয়। তাছাড়া ভিয়েতনামের কৃষক মুক্তি কমিটি ও আফ্রো-এশীয় সোলিডারিটি সংস্থার কর্মকর্তারা উক্ত কৃষক সম্মেলনে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। শিবপুরের ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলনের পর মওলানা ভাসানীর ‘হক কথা’ পত্রিকায় ‘শিবপুর থেকে টঙ্গী’ শিরোনামে চার সংখ্যায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিলো। ১৯৭২ সালের ৩০ এপ্রিল প্রদত্ত ভাষণে মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ডলার, রুবল, রুপেয়া দিয়ে বাঙলার মানুষকে চেনা যাবে না। ধর্ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই দেশে হিন্দু হলে, বৌদ্ধ হলে, খ্রিস্টান হলে তার ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা সরকারকে বহন করতে হবে। মানুষের নৈতিক উন্নতির জন্য, স্পিরিচুয়াল ডেভেলাপমেন্টের জন্য, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য যে সমস্ত শিক্ষা অপরিহার্য, তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে সরকারকে।
অবসরপ্রাপ্ত থানা শিক্ষা অফিসার ও বিশিষ্ট লেখক নূরুদ্দীন দরজী জানান, শিবপুর সম্মেলনের স্থানটি ছিলো শহীদ আসাদ কলেজ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ। অতীতে মাঠটি শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছিলো। বর্তমানে ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি ‘শিবপুর সম্মেলন’ নিয়ে একটি বুকলেট প্রকাশ করেছিলো, যেখানে উক্ত সম্মেলনকে ‘পূর্বাঞ্চল সম্মেলন’ বলা হয়েছে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বুকলেটে নাম ছাপা হয়েছে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার। আহ্বায়ক হিসেবে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ছাপা আকারে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল সম্মেলনস্থলে বিলি করা হয়েছিলো।
আপেল মাহমুদ
সাংবাদিক, গবেষক ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগ্রাহক