১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনি বি বি টকিজ সিনেমা হলটি পুড়িয়ে ফেলে। পরবর্তীতে হলটির কোনো ছবি বা চিত্র পাওয়া যায়নি। তাই এই নিবন্ধের লেখক ও প্রত্যক্ষদর্শী অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফা মিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী বি বি টকিজের এই চিত্রটি এঁকেছেন চিত্রশিল্পী শেখ নাহিদ হাসান
সিনেমা একটি আধুনিক শিল্প মাধ্যম। সিনেমা শুধু শিল্প এবং বিনোদনের মধ্যেই থাকেনি। বাণিজ্যিক শিল্প (ইন্ডাস্ট্রি) হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পৃথিবীব্যাপী। সিনেমা শিল্পের শুরুর সময়ে তাকালে দেখবো, এই শিল্পটির সাথে দর্শকদের যুক্ত হতে গেলে সিনেমা হলে যেতে হতো। বড়ো হলরুম ছাড়া সিনেমা প্রদর্শন করা যেতো না। এই শিল্প প্রদর্শনীর জন্যে সিনেমা হলও গড়ে তুলতে হয়েছে সিনেমা নির্মাণের সাথে সাথে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে বর্তমানে অবশ্য হলে না গিয়েও বাড়িতে বসে নানা প্রযুক্তিগত মাধ্যমে সিনেমা দেখা যায়।
আমার জীবনের প্রথম সিনেমা দেখা ১৯৬০-এর দিকে। তা-ও নির্দিষ্ট কোনো সিনেমা হলে নয়। একটি গুদাম ঘরে। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাবার কর্মস্থল তৎকালীন মুন্সিগঞ্জ মহকুমার লৌহজংয়ে অবস্থান করছিলাম আমরা। পড়ছি লৌহজং হাইস্কুলে। যতোটুকু মনে পড়ছে, সিনেমাটির নাম ছিলো ‘আসিয়া’ (১৯৬০)। ছবিটি প্রদর্শিত হবার পূর্বে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাশাসক আইয়ুব খানের কার্যক্রমের কিছু তথ্যচিত্র দেখানো হয়েছিলো, তা-ও মনে পড়ছে। পর্দায় জীবনের প্রথম সবাক এইসব দৃশ্য দেখার অনুভূতিগুলি এখনো মনে আছে।
বাবা লৌহজং থেকে নারায়ণগঞ্জ মহকুমার রূপগঞ্জে বদলি হলেন। অফিস ছিলো কাঞ্চন। ভর্তি হয়েছিলাম কাঞ্চন বি সি ইনস্টিটিউশনে। রূপগঞ্জ থাকাকালীন সময়ে নরসিংদীতে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে আসার সুবাদে বেশ কয়েকবার সিনেমা দেখা হয়। সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখা সেই প্রথম— ১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে। একটি উর্দু ছবি দিয়ে প্রথম হলে বসে সিনেমা দেখা। ছবিটির নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। যে-হলে বসে প্রথম সিনেমা দেখেছি, তার নাম ‘বি বি টকিজ’। নরসিংদী রেলস্টেশন রোড সংলগ্ন বৌয়াকুড় এলাকায়। নরসিংদীর প্রথম সিনেমা হল। যতোটুকু তথ্য জানা আছে, হলের জায়গাটি আমাদের নরসিংদীর ষাট-সত্তর দশকের ছাত্রলীগ নেতা, মুক্তিযোদ্ধা এবং পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের সদস্য মেজর (অব.) শামসুল হুদা বাচ্চুর বাবা সৈয়দ আলী মাস্টার সাহেবের। এই জায়গা ভাড়া নিয়ে সিনেমাপ্রেমী বিশ্বম্ভর সাহা (বিশু বাবু) সিনেমা হল গড়ে তোলেন। সময়টা ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে। ঐতিহ্যপূর্ণ এই হলটি সিনেমাপ্রেমিকদের বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠেছিলো। যতোদূর মনে পড়ছে, ‘বি বি টকিজ’-এর পূর্ণরূপ হলো ‘বিশু বাবু টকিজ’। মতান্তরে ‘বৌয়াকুড় বিশুবাবু টকিজ’। বিশু বাবুর অনুপস্থিতিতে তাঁর ছেলে মন্টু সাহা হলটি চালিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে নানা প্রতিরোধ পেরিয়ে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ পাক হানাদার বাহিনি নরসিংদী দখলে নিয়ে নেয় এবং নরসিংদী শহরে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে তাদের স্থায়ী প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে। নরসিংদী দখলের পর শুরুতেই নরসিংদীতে যে-ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনি, তার মধ্যে অন্যতম ছিলো— বি বি টকিজকে সম্পূর্ণরূপে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া।
এই হলটির সাথে আমার স্কুলজীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বাবা রূপগঞ্জ থেকে নরসিংদী থানায় কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হয়ে আসেন ১৯৬৫-র শেষদিকে। বদলির পূর্বে বাবা নরসিংদীর ব্রাহ্মন্দীতে জায়গা কিনে একটি বাড়ি করেছিলেন স্থায়ীভাবে থাকার জন্যে। আমি ব্রাহ্মন্দী কে কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হই। নতুন স্কুলে অনেক বন্ধু জুটে যায়। তাদের সাথে মিশে বি বি টকিজে নিয়মিত সিনেমা দেখার পর্ব শুরু হয়। স্কুল এবং কলেজজীবন পর্যন্ত সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার একটা প্রচণ্ড নেশা তৈরি হয়ে যায়। শৈশব-কৈশোরে আমাদের হাতে কোনো নগদ টাকা থাকতো না। সময়টা এমনই ছিলো যে, যা প্রয়োজন, সব অভিভাবকেরাই কিনে দিতেন। নগদ টাকা আমাদের হাতে দিতেন না। কিন্তু সিনেমার নেশা যখন এসে গেলো, তখন তা দমিয়ে রাখা গেলো না। প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন ছবি আসতো। বাধ্য হয়েই বাবার পকেট থেকে বা টাকা রাখার রক্ষিত স্থান থেকে বাবা-মাকে না বলে, লুকিয়ে টাকা নিয়ে সিনেমা দেখতাম। এজন্যে বাবা-মা’র অনেক গালি, মার খেতে হয়েছে। কিন্তু সিনেমা দেখা বন্ধ হয়নি।
তখন বি বি টকিজে পাকিস্তানি উর্দু ছবিই বেশি চলতো। একসময় ভারতীয় ছবিও আসতো। ১৯৬৫-র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ভারতীয় সিনেমা আসা বন্ধ হয়ে যায়। বি বি টকিজ হলের মডেল পুরাতন হলেও প্রজেক্টর এবং সামনের বড়ো পর্দার মান বেশ ভালো ছিলো। সাউন্ড সিস্টেমও খারাপ ছিলো না। হলের ভেতরের আসন ব্যবস্থাপনায় সম্মুখভাগে পর্দার কাছাকাছি ছিলো সম্মুখ আসন (ফ্রন্ট স্টল), তার পেছনে মধ্যম আসন (মিডল স্টল), তার পেছনে পশ্চাৎ আসন (রিয়ার স্টল)। হলের পেছনভাগে দ্বিতীয় তলায় প্রথম শ্রেণি (ফার্স্ট ক্লাস) এবং বেলকনি। ফ্রন্ট স্টলের ভাড়া কম ছিলো বলে সেখানে বসেই বেশি ছবি দেখেছি। মনে পড়ছে, হল এলাকায় বিচরণ, টিকেট কাটা এবং হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হতো। লুকিয়ে প্রবেশ করতাম। পরিচিত বড়োজনরা কেউ দেখে ফেললো কিনা, স্যারেরা কেউ দেখে ফেললো কিনা— তাহলে তো বাবা-মা’র মার খেতে হবে। অনেক সময় টিকেট কাটতেও বেশ সমস্যা হয়ে পড়তো। ফ্রন্ট স্টলের ক্ষেত্রে নিম্ন পেশাজীবী শ্রেণির দর্শকদের জন্যে ভীড় ঠেলে টিকেট কাটা যেতো না। তখন বাধ্য হয়ে ব্ল্যাকারদের কাছ থেকে বেশি টাকায় টিকেট কিনতে হতো। আবার কখনো দেখা গেলো ‘হাউজফুল’— সামনে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দিতো। মন খারাপ করে চলে আসা ছাড়া আর উপায় কী! সিনেমা দেখার নেশা ধরিয়ে দিতো, যখন ব্যান্ডপার্টি নিয়ে নতুন ছবির পোস্টার সম্বলিত বড়ো বড়ো প্ল্যাকার্ডসহ এলাকায় মাইকিং করতো। মনে পড়ছে, বৌয়াকুড়ের কৃষ্ণকান্ত বর্মণ বেশ দক্ষতার সাথে রসিয়ে রসিয়ে বি বি টকিজে নতুন ছবি আসলে প্রতি সপ্তাহে তার প্রচারণা চালাতো। পোস্টারে নায়ক-নায়িকার ছবি এবং তাদের অ্যাকশান দৃশ্য দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারতাম না। এখনো চোখে ভাসছে, ‘খাইবার পাস’ ছবির পোস্টারে পাকিস্তানি নায়িকা নীলু’র এক পা পাহাড়ের একপাড়ে, অন্য পা আরেক পাড়ে। মাঝখানে খাইবার পাস। সে এক অন্যরকম দৃশ্য। তখন উর্দু ছবিতে নায়িকা হিসেবে নীলু, রাণী, জেবা এবং নায়ক ওয়াহিদ মুরাদ, মোহাম্মদ আলী, সুধীর, সন্তোষ, আলাউদ্দিন প্রমুখদের বেশি দেখা যেতো।
বি বি টকিজে চলতো তিনটি শো— ০৩ টা থেকে বিকেলের প্রদর্শনী (ম্যাটিনি শো), ০৬ টা থেকে সন্ধ্যার প্রদর্শনী (ইভিনিং শো) এবং ০৯ টা থেকে রাতের প্রদর্শনী (নাইট শো)। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার থাকতো সকালের প্রদর্শনী (মর্নিং শো)। মর্নিং শো-এ চলতো ইংরেজি ছবি। কোনোকিছুই দেখা বাকি থাকতো না। সম্ভবত এসব দুষ্টুমির কারণেই বাবা দশম শ্রেণিতে ওঠার পর এসএসসি পরীক্ষার ফল ভালো করার বিবেচনায় শিবপুর হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন।
বি বি টকিজে ষাটের দশকে বাংলা সিনেমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি আমি দেখেছি। কয়েকটি ছবির নাম উল্লেখ না করে পারছি না। সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’, জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ও ‘জীবন থেকে নেয়া’সহ অনেক ছবি সে-সময় বি বি টকিজে প্রদর্শিত হয়েছে। ১৯৬৪ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে দেশের অন্যতম চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কবরী’র অভিনয়জীবন শুরু। ‘বেহুলা’ (১৯৬৬) জহির রায়হানের লোককাহিনিনির্ভর ব্যবসা সফল ছবি। এই ছবিতে নায়করাজ রাজ্জাক প্রথম নায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন। ১৯৬৯-এর গণ-আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে জহির রায়হান নির্মাণ করেন ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০)। ছবিটিকে প্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো, কিন্তু গণদাবিতে পাকিস্তান সরকার এটিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ছবিটিতে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সেই সময়কার ঢাকার রাজপথে কৃষকদের সবচাইতে বড়ো সমাবেশের ফুটেজ ব্যবহার করেন জহির রায়হান। সেই সমাবেশে আমরাও অংশ নিয়েছিলাম নরসিংদীর রায়পুরার কৃষকদের সাথে।
নরসিংদী শহরে ০৪ টি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। প্রথম সিনেমা হল বি বি টকিজ-সহ মিতালী, সুরভী এবং সংগীতা। চারটি হলই আজ মাটির সাথে মিশে গেছে। বি বি টকিজ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি দ্বারা ভস্মিভূত হয়েছে। এখন সেখানে বড়ো শপিংমল গড়ে ওঠেছে। মিতালী নরসিংদী পৌরসভার পশ্চিমপাশে দৃষ্টিনন্দন ও সবার চোখে পড়ার মতো জায়গায় একটি আধুনিক সিনেমা হল ছিলো। আজ সেখানে হল ভেঙে নদী বাংলা কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে নরসিংদীর সবচে’ বড়ো শপিংমল ও আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। সুরভী ছিলো সাটিরপাড়ায়, সংগীতা ঘোড়াদিয়া যাবার পথে। এগুলোও ভেঙে দিয়ে নতুন মার্কেট তৈরি করা হয়েছে।

ঢাকার বিখ্যাত সিনেমা হল বলাকা, মধুমিতা, অভিসার, গুলিস্তান। প্রত্যেকটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে (১৯৭০-৭৫) অনেক ছবি দেখেছি। গুলিস্তানের অস্তিত্ব আজ বিলীন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকার পুরাতন হল ‘পিকচার হাউজ’— পরবর্তী নাম ‘মুকুল’ (আজাদ), ১৯২৯। সেখানে প্রথম নির্বাক ছবি ‘দ্য লাস্ট কিস’ প্রদর্শিত হয়েছিলো। পরের প্রেক্ষাগৃহ সদরঘাটের ‘সিনেমা প্যালেস’— পরবর্তী নাম ‘মতিমহল-রূপমহল’। এই হলে দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ প্রদর্শিত হয়েছিলো। বংশালে ‘মানসী’, ইসলামপুরে ছিলো ‘লায়ন’। ঢাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য হল ছিলো ‘তাজমহল’। বাংলাদেশের বৃহত্তম সিনেমা হল যশোর জেলা সদরের ‘মনিহার’, যার আসনসংখ্যা প্রায় ১,২০০ (একহাজার দুইশত)। কিন্তু বর্তমানে দেশের সব সিনেমা হল ঝুঁকির মুখে। অনেকগুলো বিলুপ্ত। সিনেমা হলের সংখ্যা ১,২০০ থেকে এখন ১০০-র নিচে নেমে এসেছে।
চলচ্চিত্র শিল্পের একটি বৃহৎ এবং শক্তিশালী আধুনিক মাধ্যম হলেও বাংলাদেশে বিগত সত্তর বছরেও এটি পূর্ণাঙ্গ বিকশিত হতে পারেনি। তারপরও ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি)। এ-সময়েই জহির রায়হান, ফতেহ লোহানী, সালাউদ্দিন, সাদেক খান, সুভাষ দত্তের মতো প্রগতিশীল কয়েকজন চলচ্চিত্র চিন্তক ও নির্মাতার আবির্ভাব ঘটে। তাঁদের নির্মিত চলচ্চিত্রের বিষয় ছিলো জীবন-সমাজ-রাষ্ট্র। সামন্তবাদী অত্যাচার, সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট, পুঁজিবাদের আগ্রাসন এবং সর্বোপরি ভঙ্গুর মূল্যবোধের বিপরীতে ঘুরে দাঁড়ানো। কিন্তু ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র আদর্শের বদলে বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত হয়ে ওঠে। চলচ্চিত্রে চলে আসে অশালীন, চটুল সংলাপ, অশ্লীল দৃশ্য নির্মাণ, অবাস্তব কাহিনিচিত্র। পূর্ব পাকিস্তানি সময়ের উর্দু ছবির দাপটে তা লক্ষ্য করা যায়।
এতোসব বাধা-প্রতিকূলতার পরও স্বাধীনতার পরপর নতুন অঙ্গীকার নিয়ে সুস্থ চলচ্চিত্র চিন্তক, চলচ্চিত্র সাংবাদিক আলমগীর কবীর নির্মাণ করলেন ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘রূপালী সৈকতে’। এছাড়া কবীর আনোয়ারের ‘সুপ্রভাত’; সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’, ‘ডুমুরের ফুল’; আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’; আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বউ’; মসিউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলীর ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’র মতো ভালো ছবিগুলো নির্মিত হয় তখন।
সীমিত হলেও চলচ্চিত্রের এই সুস্থ ধারার উত্তরাধিকার তানভীর মোকাম্মেল, তারেক মাসুদ, হুমায়ূন আহমেদ, আবু সাইয়িদ, মোরশেদুল ইসলাম, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, অমিতাভ রেজা, তৌকীর আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী-সহ আরো অনেক নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, যাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আশার আলো পাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, অনেক উঁচুমাপের নির্মাতা তারেক মাসুদকে অকালে হারাতে হয়েছে।
নরসিংদীর প্রথম সিনেমা হল বি বি টকিজে সিনেমা দেখার উত্তাল স্মৃতি এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই পাঁচালী যখন লিখছি, তখন বাংলাদেশের নবীন নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ-এর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি ২০২১ সালের ৭৪ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘আঁ সার্তে রিগা’ পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে এবং ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটি আমাদের জন্যে আশার কথা। এই আশা নিয়ে আমরা দেখতে চাই, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সুস্থ ধারায় ফিরে আসবে, সিনেপ্লেক্সসহ সিনেমা হল গড়ে ওঠবে আবার। নতুনভাবে চলচ্চিত্র শিল্পটি হবে সমৃদ্ধ।
গোলাম মোস্তাফা মিয়া
সাবেক অধ্যক্ষ, নরসিংদী সরকারি কলেজ