নরসিংদীতে প্রবাহিত নদ-নদী ও নদীপাড়ের জনজীবন

আমি বসে বসে তাই ভাবি,
নদী কোথা হতে এল নাবি।
কোথায় পাহাড় সে কোনখানে,
তাহার নাম কি কেহই জানে।
               নদী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘নদী’ কবিতায় নদীর পুরো জন্মকথা বলে দিয়েছেন। নদী কেমন করে পাহাড়ের ঝর্নাধারা থেকে বেরিয়ে এঁকে-বেঁকে সমতলে নামে, তারপর সমতলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়ে নদীর চলা শেষ হয়, নদীর মৃত্যু ঘটে। নদী হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে প্রবাহিত জলধারা। প্রাকৃতিক নিয়মে পাহাড়ের বরফগলা পানি এবং পাহাড় হতে যে-ঝর্নাধারার সৃষ্টি, সেই ঝর্নার পানির সাথে বৃষ্টির জলধারা মিলে নিচের দিকে গভীর খাতে সর্পিলাকারে প্রবাহিত হয়েই নদীর সৃষ্টি।

নদীকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর আদি সভ্যতার উদ্ভব, বিকাশ ও বিস্তৃতি। বাংলাদেশের সভ্যতা-সংস্কৃতির উদ্ভব ও বিকাশ নদীকে অবলম্বন করেই। বাংলার প্রাচীন সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, উয়ারী-বটেশ্বর প্রাচীন নদীর পাড়েই গড়ে ওঠেছিলো। বাংলার সভ্যতার অগ্রযাত্রা, কৃষিনির্ভর জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্দর, বাজার-হাট, যোগাযোগ, প্রতিদিনের জীবনযাপন, তার প্রসার ও বিস্তৃতি নদীকে ঘিরেই।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশ নদীর পলিতে গড়ে ওঠা বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। নদী বিধৌত বাংলাদেশে ছোটো-বড়ো নদীর সংখ্যা প্রায় তিনশো’র অধিক। সমস্ত দেশটি অসংখ্য নদী, উপনদী, শাখা এবং প্রশাখা নদী দ্বারা মাকড়সার জালের মতো আচ্ছাদিত। বাংলাদেশে প্রধান নদীপ্রবাহ হচ্ছে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। রাজনৈতিকভাবে দেশের একটি শ্লোগান আছে— ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’। বস্তুত, বাংলাদেশের প্রকৃত ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। পদ্মা এবং গঙ্গা নদী একই প্রবাহ। ভারতে এর জন্ম; সেখানে নাম ‘গঙ্গা’, বাংলাদেশে রাজশাহী বিভাগ দিয়ে প্রবেশের পর এই প্রবাহের নাম হয়েছে ‘পদ্মা’। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনাও একই প্রবাহ। ‘ব্রহ্মপুত্র’র খাত পরিবর্তন হয়েই ‘যমুনা’ নাম হয়েছে। মেঘনা এবং সুরমাও একই প্রবাহ। মূলত, বাংলাদেশের অসংখ্য নদী, যেগুলো সুন্দর সুন্দর নাম নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে, সেগুলো মূলত পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা-ব্রহ্মপুত্র’র শাখা।

নরসিংদী জেলায় প্রবাহিত নদ-নদী
বাংলাদেশের নদী বাংলাদেশের প্রাণ। তদ্রুপ নরসিংদীর নদীগুলোও নরসিংদীর প্রাণ। নরসিংদীতে নদীর প্রধান প্রবাহ ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং তাদের শাখা নদী শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ, কলাগাছিয়া, হাড়িধোয়া, গঙ্গাজলী, বানার, কয়রা। নরসিংদীর ব্যবসা-বাণিজ্য, নদীবন্দর গড়ে ওঠেছে ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, শীতলক্ষ্যার পাড়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। গঙ্গাজলী এবং কয়রা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠেছিলো হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা ‘উয়ারী-বটেশ্বর’। নদী দুটি আজ মৃত। ব্রহ্মপুত্র’রও একটি প্রধান প্রবাহ আজ মৃত, যা নরসিংদীর পারুলিয়া, চর্ণগরদী, পাঁচদোনা, শেখেরচর (বাবুরহাট), মাধবদী, মহজমপুর, লাঙ্গলবন্দ হয়ে শীতলক্ষ্যায় শেষ হয়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র’র বড়ো প্রবাহটি কিশোরগঞ্জ জেলার সীমারেখা হয়ে মনোহরদী, বেলাব অতিক্রম করে ভৈরবের কাছে মেঘনায় মিলিত হয়েছে।

গঙ্গাজলী ও কয়রা নামক নদী দুটির অস্তিত্ব পুরোনো ও নতুন অনেক মানচিত্র খুঁজেও পাওয়া যায়নি। বেলাব উপজেলার ‘হাড়িসাঙ্গান’ গ্রামে নদী দুটির প্রবাহ এখনো বিদ্যমান। তবে তা খুবই ক্ষীণ ধারায় বহমান।

ব্রহ্মপুত্র
নরসিংদীর উপর দিয়ে প্রবাহিত অন্যতম নদ ব্রহ্মপুত্র। হিন্দুশাস্ত্রমতে, দেবতা ব্রহ্মা’র মানসপুত্ররূপে এর নাম হয়েছে ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্র নদ উত্তর হিমালয়ে অবস্থিত কৈলাশ পর্বতশৃঙ্গের হিমবাহের অবিরত জলধারা থেকে উৎপত্তি লাভ করে তিব্বতের মানস সরোবরের সাথে মিলিত হয়ে উঁচু মালভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘুরে ভারতের অরুণাচল ও আসামে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ব্রহ্মপুত্র’র গতিপথ অতি বিচিত্র। কালের ধারায় বিভিন্ন পথে প্রবাহিত হয়েছে এটি। পুরোনো ব্রহ্মপুত্র’র প্রধান প্রবাহটি জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ হয়ে শেরপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এসে মধুপুর গড় এলাকার কাছে বংশি ও তুরাগ নামে দুটি শাখা নদীর সৃষ্টি করেছে। মূল প্রবাহ ময়নমনসিংহ জেলায় প্রবেশ করে ময়মনসিংহ শহর ও গফরগাঁ’র পাশ দিয়ে সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোকের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীকে শাখা হিসেবে জন্ম দিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া অতিক্রম করে নরসিংদী জেলায় প্রবেশ করে দুটি ধারায় বিভক্ত হয়। একটি ধারা পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে নরসিংদী জেলার চালাকচর, বড়চাপা, পোড়াদিয়া ও বেলাব এসে আবার দুভাগে ভাগ হয়। ডানের ধারা নরসিংদীর আড়িয়াল খাঁ নামে এবং বামের প্রধান ধারা (পুরোনো ব্রহ্মপুত্র) তার অপরিবর্তিত নামে নরসিংদীর রায়পুরার সীমান্ত সংলগ্ন ভৈরব বাজারের পাশ দিয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এটিই পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের প্রধান প্রবাহ নামে পরিচিত।

কিন্তু মেজর রেনেল কর্তৃক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র’র মূল প্রবাহের প্রধান স্রোতধারা মনোহরদী উপজেলার সর্ব-উত্তরে আড়ালিয়া নামক স্থানে দক্ষিণ দিক দিয়ে মনোহরদীর হাতিরদিয়া, শিবপুরের লাখপুর, পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর, পারুলিয়া, চর্ণগরদী, জিনারদী হয়ে পাঁচদোনা, শীলমান্দী, শেখেরচর (বাবুরহাট), মাধবদী থেকে আড়াইহাজার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত বরাবর প্রবাহিত হয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের দক্ষিণ দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে শীতলক্ষ্যা-ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর সঙ্গমস্থল কলাগাছিয়া নামক স্থানে মেঘনার সাথে মিলিত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দের কাছে নদীটি এখনো সচল। নদীর এই অংশে হিন্দু সমাজের পুণ্যস্নানের পঞ্চমীঘাট রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র’র এই প্রবাহের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে পাঁচদোনা, বানিয়াদী, মাধবদী, আলগী, মহজমপুর এবং মনোহরদীতে পুণ্যস্নানের ঘাট অতীতে থাকলেও এখন নদী শুকিয়ে যাওয়া এবং দূষণের কারণে তা স্নানের অনুপযোগী। এসব এখন ইতিহাস-কিংবদন্তীর অংশ।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ | ছবিটি নরসিংদী সদর উপজেলার শেখেরচর-বাবুরহাট অংশ থেকে তোলা

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র’র এই প্রবাহের অংশে ব্রহ্মপুত্র’র পাড়ের খালি জায়গায় গড়ে ওঠেছে প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত বাংলাদেশের তাঁতবস্ত্রশিল্পের সবচাইতে বড়ো হাট। বস্ত্রশিল্পের সবচেয়ে বড়ো ব্যবসাকেন্দ্র শেখেরচরের বাবুরহাট, যা নরসিংদীকে দেশ ও দেশের বাইরে পরিচিত করেছে। নরসিংদী জেলার ব্র্যান্ডও হয়েছে ‘তাঁত শিল্পের মেলা/ নরসিংদী জেলা’। কথিত আছে, মাধবদীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একসময় আড়ং বসতো। আনন্দী গ্রামের সন্নিকটে ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আড়ং নামের কাপড়ের এই হাট জমজমাট ছিলো। মাধবদী-শেখেরচর তাঁতশিল্পকেন্দ্র হওয়ার নেপথ্যে এই আড়ং নামের হাটের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। …শেখেরচর বাবুরহাট ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের একদম লাগোয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে নরসিংদী জেলার শিলমান্দী ইউনিয়নে অবস্থিত।

ব্রহ্মপুত্র নদের এই প্রবাহের ব্রহ্মপুত্রতীরের নরসিংদীর কৃতীসন্তান মাধবদীর পাকড়াশী বংশের অগ্নিযুগের বিপ্লবী সতীশ পাকড়াশী। পাঁচদোনার বাংলা ভাষায় পবিত্র কোরানের প্রথম অনুবাদক ভাই গিরিশচন্দ্র সেন, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিসাধক সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য। ভাটপাড়ার নিখিল ভারতের প্রথম আইসিএস স্যার কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত (কে জি গুপ্ত), পারুলিয়ার সাধকপুরুষ ও সঙ্গীতসাধক ও লোকসাহিত্যিক পাগল দ্বিজ দাস।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের যোগাযোগের একটি বড়ো মাধ্যম ছিলো নৌ-পথ। নরসিংদীর মনোহরদী থেকে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র’র এই প্রবাহ অংশে একসময় গয়নার নৌকা চলাচল করতো। এখন এই অংশের নদী মূলত মৃত। অনেক স্থানে নদীর অস্তিত্ব বোঝাও কঠিন। বর্তমান সরকার অন্যান্য নদীর মতো ব্রহ্মপুত্র’র এই অংশ খনন করলেও তা নদীর প্রবাহ তৈরি করার মতো অবস্থা হয়নি। অনেক জায়গায় এটি মৃত খালে পরিণত হয়েছে।

শীতলক্ষ্যা
শীতলক্ষ্যা নদী পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের অন্যতম প্রধান শাখা। ১৭৮০ সালে মেজর জেমস রেনেলের ব্রহ্মপুত্র নদ জরিপ তথ্য থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলাধীন ঐতিহাসিক দুর্গশহর এগারসিন্দুরের কাছাকাছি গাজীপুর জেলার টোক নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা বানার নামে উৎপত্তি হয়ে নরসিংদী জেলার লাখপুরের কাছে শীতলক্ষ্যা নাম ধারণ করেছে। শীতলক্ষ্যা নদীটি নরসিংদী জেলার পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণ করেছে। নদীর পূর্ব তীরে নরসিংদী জেলার মনোহরদী, শিবপুর, পলাশ ও নরসিংদী সদর উপজেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান গড়ে ওঠেছে। যেমন : মনোহরদী, হাতিরদিয়া, শিমুলিয়া, লাখপুর, চরসিন্দুর, ঘোড়াশাল, ডাঙ্গা বাজার প্রভৃতি নদীবন্দর। পশ্চিম প্রান্তে গাজীপুর জেলার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীটি নারায়ণগঞ্জ সদর হয়ে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়ার কাছে ধলেশ্বরী নদীতে পতিত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী সর্বমোট ১০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। উৎস থেকে ধলেশ্বরী নদীতে পতিত হওয়া অবধি প্রবাহপথে শীতলক্ষ্যা নদীটি গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান গড়ে তুলে প্রবাহিত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর উভয় তীর বিস্তীর্ণ জনপদ, লাখ-কোটি মানুষের বসতি।

শান্ত এই নদী সম্পর্কে জনশ্রুতি, শীতল আর লক্ষ্মী— এই দুই বিশেষণেই শীতলক্ষ্যার নামকরণ। শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বাংলাদেশের স্বাদু পানির নদ-নদীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ ও নির্মল। একমাত্র এই কারণেই শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠেছিলো ভুবনখ্যাত প্রাচীন মসলিন বস্ত্রশিল্প।

ইংরেজ আমলের সরকারি নথিপত্রে এই নদীকে তৎকালীন ঢাকা জেলার সুন্দরতম নদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যার পাড় উঁচু, ভরা বর্ষাতেও দুকূল ছাপিয়ে যায় না। নদীভাঙন নেই বললেই চলে। এজন্যেই এই নদীতীরে গ্রাম, বন্দর, ব্যবসাকেন্দ্রের পাশাপাশি উভয় কূলেই এখন ব্যাপক শিল্পায়ন— গড়ে ওঠেছে বহু কল-কারখানা। দেশ বিভাগের আগে শীতলক্ষ্যার পাড়ে বেশ কয়েকটি সোডা ওয়াটার, লেমনেড ইত্যাদি কারখানা গড়ে ওঠেছিলো। বর্তমানে এই নদীর উভয় তীর বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। এরকম বাণিজ্যিক গৌরব বাংলাদেশের খুব কম নদীরই আছে। শীতলক্ষ্যার পাড়েই গড়ে ওঠেছে দেশের সুবৃহৎ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর। গড়ে ওঠেছিলো আদমজী-সহ অসংখ্য পাটকল। নদীর নরসিংদী প্রান্তে রয়েছে চরসিন্দুর দেশবন্ধু চিনিকল, পলাশে প্রাণ কোম্পানির বিশাল শিল্পকারখানা, দুটি সারকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (ওয়াপদা), সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ অগণিত ছোটো-মাঝারি-বৃহৎ শিল্পকারখানা।

নদীপাড়ের অনেক স্থান হয়ে ওঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। গড়ে ওঠেছে ছোটো-বড়ো রিসোর্ট। নদীর পশ্চিম প্রান্তে কালীগঞ্জের নাগরীতে রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এলাকা। রয়েছে পর্তুগিজ বণিকদের গড়া গির্জা।

একসময় এই শীতলক্ষ্যার নদীপথই ছিলো এই এলাকার সাথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের যোগাযোগের মাধ্যম। চলতো নৌকা-লঞ্চ-স্টিমার। গুরুত্বপূর্ণ এই নদীর ব্যস্ততা বর্তমানে অনেক কমে যাচ্ছে। শিল্পবর্জ্য নদীকে করেছে ব্যাপকভাবে দূষিত।

আড়িয়াল খাঁ
ব্রহ্মপুত্র নদের আরেকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শাখা এবং সুন্দরতম নদী নরসিংদীর বুকে প্রবাহিত আড়িয়াল খাঁ নদ। আড়িয়াল খাঁ নদ কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী ও কুলিয়ারচর এবং নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার সীমান্ত এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের শাখা হিসেবে উৎপত্তি লাভ করে নরসিংদী জেলার মধ্যে উত্তর-দক্ষিণে এঁকে-বেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। আড়িয়াল খাঁ নদ মনোহরদী উপজেলার উত্তর-পূর্ব পাশ দিয়ে বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া, পাটুলি, অন্যদিকে বিন্নাবাইদ হয়ে বেলাব বাজারের কাছে এসে আবার ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহের সাথে যুক্ত হয়ে আমলাব, চর উজিলাব অতিক্রম করে বারৈচার সন্নিকটে জংলী শিবপুর বাজারের নিকট নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় প্রবেশ করেছে। রায়পুরা উপজেলায় উত্তর বাখরনগর, চর মরজাল, যোশর বাজার, রাধাগঞ্জ বাজার, কুঠির বাজার হয়ে আদিয়াবাদ শতবর্ষী স্কুলের পাশ দিয়ে রহিমাবাদ, ডৌকারচর, হাসনাবাদ বাজার, আমীরগঞ্জ হয়ে একদিকে রায়পুরার নলবাটা, অন্যদিকে নরসিংদী সদরের হাজীপুর ইউনিয়নের খাসেরচরের কাছে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। মেঘনায় মিলিত হয়ে পশ্চিম দিকে নরসিংদী বাজারের পুরাতন থানার ঘাট পর্যন্ত প্রবাহের ধারা বজায় রেখে হাড়িধোয়া শাখা নদীকে জন্ম দিয়েছে। মেঘনায় মিলনস্থল থেকে নরসিংদী থানার ঘাট পর্যন্ত এলাকায় বর্ষাকালে নদীপ্রবাহের গতিময় ধারার দুটি নদীর পানির আলাদা আলাদা রঙ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়।

আড়িয়াল খাঁ নদের প্রবাহিত জেলা : কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী। প্রবাহিত উপজেলা : কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি, কুলিয়ারচর, নরসিংদী জেলার মনোহরদী, বেলাব, রায়পুরা ও নরসিংদী সদর। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ৭৯ মিটার। নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটিতে সারাবছরই পানির প্রবাহ থাকে। জুন-সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পানি প্রবাহের মাত্রা বেশি হলেও নদীপাড় নিমজ্জিত হয় না। তবে বর্তমানে নদীর তলদেশঅঞ্চল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীতীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাচীন বাজার পোড়াদিয়া বাজার, বেলাব বাজার, জংলী শিবপুর বাজার, যোশর বাজার, রাধাগঞ্জ বাজার, কুঠির বাজার, রহিমাবাদ বাজার, হাসনাবাদ বাজার। বেলাব বাজারসহ অন্যান্য বাজারের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সোনালি আঁশ পাটসহ অন্যান্য পণ্য নদীপথে নরসিংদীতে আনা হতো। পাট জমা হতো নরসিংদীর মেঘনা ও আড়িয়াল খাঁ পাড়ের বড়ো বড়ো পাটগুদামে, আদমজী-সহ বড়ো বড়ো পাটকলে পাঠানোর জন্যে। এই নদীর উপর রয়েছে আমীরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলসেতু, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সেতু। বর্তমান সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এই নদীই পণ্য পারাপার এবং নৌ-পথে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিলো। অধ্যাপক সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্যের ‘মহেশ্বরদীর ইতিহাস’ গ্রন্থের তথ্য থেকে জানা যায়, আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী মরজাল গ্রাম হইতে মৌর্য যুগের বহুতর রৌপ্যমুদ্রা আবিষ্কৃত হয়। এর মধ্যে ৯০ টি মুদ্রা ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই স্থানে মৌর্য যুগের মুদ্রার আবিষ্কার হইতে বুঝা যায় যে, কত প্রাচীনকাল হইতে এই অঞ্চলে আর্যসভ্যতার বিস্তার হয়েছে।

আড়িয়াল খাঁ নদীর ঠিক পাড়ে সুন্দর খেলার মাঠসহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আদিয়াবাদ স্কুল, যে-স্কুল তার ঐতিহ্য নিয়ে শতবর্ষ পার করেছে। আর কাছাকাছি নদীপাড়ের রহিমাবাদ ছিলো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং পাকিস্তান পরবর্তী বাম রাজনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ আস্তানা।

গঙ্গাজলী ও কয়রা
গঙ্গাজলী ও কয়রা নদী দুটিও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। দুটি নদীই নরসিংদীর প্রাচীন নদী। বর্তমান বেলাব উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন সভ্যতার প্রত্নস্থান এই গঙ্গাজলী, কয়রা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরেই গড়ে ওঠেছিলো। গঙ্গাজলী ও কয়রা— দুটি নদীই আজ মৃত এবং অস্তিত্বহীন। বেলাব-শিবপুর অঞ্চলে নদী দুটির কিছু মরা খাল এবং ছোটো খালের মতো অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। বেলাব’র হাড়িসাঙ্গান গ্রামে গঙ্গাজলীর একটি প্রবাহ এখনো দেখা যায়। নদীটির উপর একটি সেতুও রয়েছে।

নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার আশরফপুর গ্রামটি গঙ্গাজলী নদীর তীরে অবস্থিত বলে জানা যায়। সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে আশরফপুরে বৌদ্ধবিহার গড়ে ওঠার পেছনে গঙ্গাজলী নদীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে নরসিংদীর ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগ্রাহক আপেল মাহমুদ সাথী উল্লেখ করেছেন।

গঙ্গাজলী নদী | ছবিটি বেলাব উপজেলার হাড়িসাঙ্গান গ্রামের গঙ্গাজলী বাজার অংশ থেকে তোলা
কয়রা নদী | ছবিটি বেলাব উপজেলার হাড়িসাঙ্গান গ্রাম থেকে তোলা

সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এবং মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান রচিত নরসিংদীর প্রত্নস্থান বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ ‘উয়ারী-বটেশ্বর : শেকড়ের সন্ধানে’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে : আড়াই হাজার বছর আগে নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদ উপত্যকায় গড়ে ওঠে এক প্রাচীন জনপদ। …উয়ারী-বটেশ্বর নরসিংদী জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান। …ইতিমধ্যে উয়ারী-বটেশ্বরের মানববসতি খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতকের বলে প্রমাণিত হয়েছে। উয়ারী-বটেশ্বর ছিলো নদীবন্দর, বাণিজ্যকেন্দ্র ও স্বল্পমূল্যবান পাথরের পুঁতি উৎপাদনকেন্দ্র। …পুরাতন ব্রহ্মপুত্রনদ এবং এর শাখা আড়িয়াল খাঁ, পাহাড়িয়া (কলাগাছিয়া), গঙ্গাজলী ও কয়রা এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। …এখনো উয়ারী গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে প্রাচীন কয়রা নদীর সংকীর্ণ খাত। একসময় হয়তো এই নদীই ছিলো আরও প্রশস্ত। কয়রা নদীর আরও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ মিশেছে আড়িয়াল খাঁ (ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা) নদীর সঙ্গে। এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্রই ছিল একদা ব্রহ্মপুত্র নদের মূল স্রোত। ১৭৮৭ সালের ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের মূল গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়, ফলে এটি পরিচিত হতে থাকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ হিসেবে। বর্তমান আড়িয়াল খাঁ ও ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গমস্থল থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের দূরত্ব চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।
…সম্ভবত উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলের অধিবাসীরা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের (কয়রা, গঙ্গাজলী, পাহাড়িয়া, আড়িয়াল খাঁ শাখাসহ) তীরবর্তী উর্বর উপত্যকা ভূমিতে কৃষিকাজের সেচের জন্য নদ-নদীর পানি ব্যবহার করত। মৎস্য শিকার, যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে নদ-নদীর ব্যবহার ছিল খুবই কার্যকর এবং বিকল্পরহিত। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও সংস্কৃতিতে, তাদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে এবং এ অঞ্চলে যে সমৃদ্ধ নগরব্যবস্থার প্রমাণ ইতিমধ্যে উন্মোচিত হয়েছে, তাতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

হাড়িধোয়া
নরসিংদীর একটি ছোটো নদী হাড়িধোয়া। আড়িয়াল খাঁ নদীটি খাসেরচর এবং নলবাটার মধ্য দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়ে তার প্রবাহের গতিধারা পশ্চিম দিকে নরসিংদী পুরাতন থানার ঘাট পর্যন্ত এসে এই প্রবাহের নদীকে জন্ম দিয়েছে। নদীটি ছোটো হলেও নরসিংদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। বর্তমানে শিল্পবর্জ্যে নদীটি চরমভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে।

নদীটির নামকরণ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ-সাংবাদিক আপেল মাহমুদের বক্তব্য : হাড়িধোয়ার তীরে হাজীপুর ও নরসিংদী বাজারে একসময় কুমার ও পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা বিপুল পরিমাণে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতো এবং উক্ত নদীতে সেগুলো ধোয়া-মোছার কাজ করতো। সম্ভবত এ হাড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজ থেকে হাড়িধোয়া নামটি এসেছে। বর্তমানেও উক্ত নদীর তীরে অবস্থিত হাজীপুর ব্রিজের পশ্চিম পাশের জায়গাটি পাতিলবাড়ি হিসেবে পরিচিত। এই পাতিলবাড়ি থেকে শহরের হেমেন্দ্র সাহার মোড় পর্যন্ত সড়কের নাম হয়েছে পাতিল বাড়ি রোড।

হাড়িধোয়া নদী | ছবিটি নরসিংদী সদর উপজেলার পুরানপাড়া অংশ থেকে তোলা

নদীটি নরসিংদী বাজার, হাজীপুর, বৌয়াকুড়, আরশীনগর, বীরপুর, পুরানপাড়া, বাদুয়ারচর, পুটিয়া বাজার, ঘোড়াদিয়া, ভরতেরকান্দি, ভেলানগর, চিনিশপুর ও চর্ণগরদী হয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। নদীটির প্রবাহিত জেলা : নরসিংদী। প্রবাহিত উপজেলা : নরসিংদী সদর, শিবপুর ও পলাশ। নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। প্রশস্ততা গড়ে ৬১ মিটার। নদীটির গতিপ্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটি দেখতে খুবই সুন্দর, যদিও শিল্পবর্জ্যে দূষিত। তীরবর্তী স্থাপনা : নরসিংদী পৌরসভা ও বাজার, পুটিয়া বাজার, কালী বাজার। এই নদীর উপর দিয়ে পুরানপাড়ায় ঢাকা-নরসিংদী-চট্টগ্রাম রেলসেতু, ভেলানগরে ঢাকা-নরসিংদী-সিলেট মহাসড়কসহ অনেকগুলি সেতু রয়েছে। হাড়িধোয়ার পাড়ে বেশকিছু ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে ওঠেছিলো। নদীটির উৎসস্থলের সাথেই নরসিংদী পাতিলবাড়ির সন্নিকটে দেশখ্যাত কবিয়াল ও বৈষ্ণবসাধক কবিগুণাকর হরিচরণ আচার্যের বসতবাড়ি, সমাধি এবং শ্রী শ্রী বিষ্ণুপ্রিয়া আশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। একটু অগ্রসর হলেই বৌয়াকুড় নদীপাড়ে সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য, আধ্যাত্মিক সাধক, গীতিকার সামসুদ্দিন আহমেদ এছাকের সমাধি এবং তাঁর গড়ে তোলা ‘আরশীনগর’। চিনিশপুরের ঐতিহাসিক কালীবাড়ী মন্দির ও আশ্রম, যেখানে একসময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিলো।

নদীপাড়ের বীরপুর-পুরানপাড়ার হাজীপুর অংশে জেলেপাড়া রয়েছে। এই জেলেপাড়ার দিকে তাকালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’-তে বর্ণিত ঘনবসতিপূর্ণ জেলেপাড়ার বর্ণনার কথা স্মরণে আসে।

কলাগাছিয়া/পাহাড়িয়া
পাহাড়িয়া নামের এই নদীটি নরসিংদী জেলাধীন বেলাব-শিবপুর উপজেলার বিলাঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে শিবপুর সদরের শিবপুর বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শিবপুরের পুরানদিয়া, পালপাড়া, ব্রাহ্মন্দী, খলাপাড়া বাজার, নোয়াদিয়া, জাঙ্গালিয়া হয়ে রায়পুরা উপজেলার ডৌকারচর দিয়ে আমীরগঞ্জের কাছে আড়িয়াল খাঁ নদীতে পতিত হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে নদীটি কলাগাইছ্যা (কলাগাছিয়া) নদী নামে সর্বাধিক পরিচিত। নদীর উৎসমুখ বিলাঞ্চল, পতিত হয়েছে আড়িয়াল খাঁ নদীতে। প্রবাহিত হয়েছে নরসিংদী জেলার বেলাব, শিবপুর, রায়পুরা উপজেলার মধ্য দিয়ে। নদীর র্দৈঘ্য প্রায় ২৮ কিলোমিটার, প্রশস্ততা গড়ে ৫৭ মিটার। নদীর গতিপথ সর্পিলাকার। নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ দেখা যায়। তবে বর্ষা মৌসুমে এর প্রবাহমানতা অনেকটা বেড়ে যায়। নদীটি তুলনামূলকভাবে দুষণমুক্ত। শুকনো মৌসুমে নদীর পানিপ্রবাহের দু’পাশের শুকনো জায়গায় ধানের চারা উৎপাদন ও ধানের চাষে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। বর্তমানে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই নদীতে লঞ্চ চলতো যাতায়াতের জন্যে। নদীর দুই পাড়ের জনপদে প্রচুর তরি-তরকারি, ফলমূল ও নানা কৃষিপণ্যের প্রচুর ফলনের পেছনে এই নদীর ভূমিকা রয়েছে। সর্পিলাকার এই নদীর গতিপথের দৃশ্য খুবই মনোরম। নরসিংদীর বিশিষ্ট ছড়াকার আবু আসাদ রচিত ‘বর্ষা এলো, বৃষ্টি এলো’ নামে গীতি-নৃত্যনাট্যে এই কলাগাছিয়া নদীর সুন্দর বর্ণনা রয়েছে।

মেঘনা
পৃথিবীর বৃহৎ নদীগুলোর অন্যতম মেঘনা এবং বাংলাদেশে প্রশস্ততায় বৃহত্তম নদী। হিমালয় বলয় বহির্ভূত নদী মেঘনা। আসামের পার্বত্য অঞ্চল থেকে জন্ম নিয়ে ‘বরাক’ নদী আসামের শেরপুরের কাছে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উত্তরের শাখা সুরমা পশ্চিম দিকে ছাতক, সিলেট ও সুনামগঞ্জের উপর দিয়ে ধীর ও সর্পিল গতিতে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে। মেঘনা ভৈরব বাজারের কাছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে। তারপর আরো দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে চাঁদপুরের কাছে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। আরো দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নোয়াখালী ও ভোলা দ্বীপের মধ্য দিয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। সুরমাসহ মেঘনা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫০ মাইল।

মেঘনা নদী মোট দুটি অংশে বিভক্ত। একটি মেঘনা আপার, অপরটি মেঘনা লোয়ার। উৎস থেকে শুরু করে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলাধীন ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা আপার। নরসিংদী জেলায় প্রবাহিত মেঘনার অংশটি আপার। চাঁদপুর থেকে শুরু করে মেঘনা-পদ্মার মিলিত স্রোত মেঘনা লোয়ার নামে পরিচিত।

মেঘনা পৃথিবীর বড়ো নদীগুলোর মতোই অনেক বেশি বৃষ্টির পানি বহন করে। খাসিয়া-জয়ন্তীয়া পাহাড়, শিলং উপত্যকা ও চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি বহন করে আনে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির বিপুল জলরাশির জন্যে সিলেটে বড়ো বড়ো বিল বা হাওর তৈরি হয়েছে।

চাঁদপুরের কাছে পদ্মা-মেঘনার মিলনস্থলে এবং মেঘনার মোহনার বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মেঘনার নৌ-পথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মেঘনার কোনো কোনো অংশে, বিশেষ করে ভৈরব-আশুগঞ্জ, নরসিংদী, আড়াইহাজার, দাউদকান্দি অংশের তীরে প্রচুর শিল্পকারখানাও গড়ে ওঠেছে। ভৈরবের রেলওয়ে সেতু, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সেতু, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সেতুর যোগাযোগে বিশাল ভূমিকা রয়েছে। মেঘনা নদী নিয়ে দেশ-বিদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিক কবিতা-গান রচনা করেছেন। মেঘনার অববাহিকায় রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত উর্বর ফসলি জমি।

মেঘনা নদী কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের কাছে এসে ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার সঙ্গমস্থলে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর-গৌরীপুর দিয়ে নরসিংদী জেলায় প্রবেশ করেছে। এখানে মেঘনার দুটি ধারা। মূল ধারাটি পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সীমান্ত এবং পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর, পাড়াতলী, বাঁশগাড়ী, মির্জানগর, চরমধুয়া হয়ে নরসিংদী সদর অতিক্রম করে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অন্য ধারাটিও বিশাল প্রশস্ততায় রায়পুরার মহেষপুর, রায়পুরা সদর, শ্রীনগর, চরসুবুদ্ধি, নীলক্ষ্যা, চর আড়ালিয়া হয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার নরসিংদী পৌরসভা এলাকা অতিক্রম করে শিলমান্দী, মহিষাশুড়া, পাইকারচর হয়ে মূল মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। মাঝখানের চরে নরসিংদী সদর উপজেলার ৪ টি ইউনিয়ন নদীর পলিতে গড়ে ওঠেছে।

মেঘনা নদী | ছবিটি নরসিংদী সদর উপজেলার শেখ হাসিনা সেতুর করিমপুর অংশ থেকে তোলা | ছবিসূত্র : ইন্টারনেট

নরসিংদী জেলার রায়পুরা এবং নরসিংদী সদর উপজেলায় মেঘনা নদী প্রবাহিত হয়েছে। রায়পুরা এবং নরসিংদী সদরে বিশাল চরাঞ্চল গড়ে ওঠেছে মেঘনা নদীর পলিমাটিতে। রায়পুরায় চাঁনপুর, পাড়াতলী, শ্রীনগর, বাঁশগাড়ী, চরমধুয়া, মির্জাচর— এই ৬ টি ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রাম মেঘনার দুই প্রবাহের মাঝখানে পলিতে গড়ে ওঠা বিশাল জনপদ। নদীর পশ্চিম প্রান্তের অংশেও মহেষপুর, চরসুবুদ্ধি, নীলক্ষ্যা, চর আড়ালিয়া, নদীর পলিতে গড়া জনপদ। নরসিংদী সদর উপজেলার ৪ টি ইউনিয়ন করিমপুর, নজরপুর, আলোকবালী, চরদিঘলদীর অসংখ্য গ্রামও নদীর মূল দুই প্রবাহের মাঝখানে গড়ে ওঠা চরাঞ্চল। মেঘনার প্রবাহের এই বিশাল চরাঞ্চলে মেঘনা নদীর মূল দুই প্রবাহের পাশাপাশি মেঘনার অসংখ্য শাখাও জালের মতো বিস্তৃত হয়ে আছে। নরসিংদীর মানচিত্রের দিকে তাকালে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। এই চরাঞ্চল নরসিংদীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময়। এই বৈচিত্র্য নরসিংদীর ভূমিতে বিশেষভাবে দৃষ্টিযোগ্য। নরসিংদী জেলার উত্তর-পূর্ব দিকে লালমাটির পাহাড়, টিলা, ব্রহ্মপুত্র নদের পলিতে গড়া প্রাচীন সমতল ভূমি, বৃক্ষরাজির বনাঞ্চলের বৈচিত্র্যময় এলাকা। সেখানে কয়েক হাজার বছর পূর্বের উয়ারী-বটেশ্বরসহ অনেক প্রত্নস্থান আবিষ্কৃত হয়েছে। দক্ষিণ অংশে মেঘনার নতুন মাটির বিশাল চরাঞ্চল, যে-অঞ্চলের ভাষা, জীবনযাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ নরসিংদীকে বৈচিত্র্যমণ্ডিত করেছে।

নদীবেষ্টিত নরসিংদীর চরাঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি ও মাছ ধরা। সারা বছরই মাছ ধরার কাজ চলে। শীত মৌসুমে জালের মতো জড়িয়ে থাকা নদীর শাখা-প্রশাখায় প্রচুর মাছের ঘের থেকে বড়ো বড়ো মাছ ধরা হয়। নদীপাড়ের এই জনপদে ধান, পাট, গম, আলু, মরিচ, সরিষা ছাড়াও প্রধান অর্থকরী ফসল উচ্ছে, তরমুজ, বাঙ্গি, খিরা প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। আর রয়েছে গৃহপালিত পশু-পাখি। পানিবেষ্টিত এলাকা হিসেবে প্রচুর হাঁস পালিত হয় এই অঞ্চলে।

অতীতে চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিলো নৌকা এবং পায়ে হাঁটা। ঘরে ঘরে ছিলো নৌকা। বর্তমানে রাস্তাঘাট হয়েছে। নরসিংদী সদরের চরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের জন্যে মেঘনা নদীতে শেখ হাসিনা সেতু নির্মিত হয়েছে। এই সেতু মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। নরসিংদীর মেঘনায় এখনো লঞ্চ চলে; নরসিংদী হতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মরিচা, বাঞ্ছারামপুর, সলিমগঞ্জ, নবীনগর রুটে। সিলেট, সুনামগঞ্জ থেকে ভৈরব বাজার-আশুগঞ্জ-নরসিংদী হয়ে মেঘনার নৌ-পথে ভারি-মাঝারি-ছোটো নৌ-যানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনসহ সারাদেশের সাথে এখনো যোগাযোগ রয়েছে। একসময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ভৈরব বাজারের মেঘনার নৌ-পথে স্টিমার চলতো। নরসিংদী অংশে গুরুত্বপূর্ণ ঘাট ছিলো ভঙ্গারচর (বালাপুর জমিদার বাড়ির ঘাট), নরসিংদী সদর ঘাট, হাইরমারা-মনিপুরা বাজার, রায়পুরা।

নরসিংদীর মেঘনা নদীবাহিত চরাঞ্চলের একটি অসুন্দর বিষয়ও যুগ যুগ ধরে বহন করতে হচ্ছে জনপদটিকে। সেটি হলো বংশগত-গোষ্ঠীগত-গ্রামগত বিরোধ ও অন্যান্য তুচ্ছ সমস্যা নিয়ে মারামারি-খুনখারাবি। ঘোষণা দিয়ে লাঠি, পুরকি, বল্লম, রামদা’, বাঁশের চিকন ফলাযুক্ত নানা অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ ও লড়াই, যা একটানা কয়েকদিনও চলে। সারাদেশের মানুষ এই লড়াইকে ট্যাঁটাযুদ্ধ হিসেবে চেনে।

এই চরাঞ্চলে অনেক গুণীজনেরও জন্ম হয়েছে, যাঁদের শৈশব কেটেছে নদীপাড়ের জীবনযাত্রায়। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম যোদ্ধা শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের নাম, যাঁর পৈতৃক নিবাস ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার মিলনস্থল রায়পুরার রামনগরে। একই গ্রামের সন্তান সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ আলাউদ্দিন আল আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন। রায়পুরার পাড়াতলী গ্রামের সন্তান ও আমাদের কালের শ্রেষ্ঠ আধুনিক কবি শামসুর রাহমানসহ অনেক গুণী মানুষের জন্ম ও শৈশবস্মৃতি নিয়ে বেড়ে ওঠা এই মেঘনার পাড়। কবি শামসুর রাহমান মেঘনা নদী নিয়ে তাঁর ‘একজন নদীর উদ্দেশে’ কবিতায় অসাধারণ ও আবেগময় অনুভূতি প্রকাশ করেছেন :

মাতামহ, পিতা নব্য জীবিকার টানে গ্রাম বাংলার ছোট
পাড়াতলী ছেড়ে, থই থই ধানশোভা,
মেঘনার তটভূমি, তরঙ্গে তরঙ্গে রৌদ্র-চাঁদিনীর ব্যালে
অনেক পেছনে রেখে ইট পাথরের
বেগানা শহরে ডেরা বাঁধলেন। শর্ষেক্ষেতময় প্রজাপতি, ঘুঘু,
মেঘনার ঢেউয়ের সঙ্গীত রক্তে দিয়েছে অদম্য কত দোলা।
* * *
মেঘনা আমার প্রিয়া কেন এমন ব্যাকুল ডাকো বারবার?
মেঘনা আমার শৈশবের, যৌবনের কতদিন করেছ হরণ
অনায়াসে, আমার ভেতরে
জাগিয়েছ কী বিপুল অগণিত ঢেউ,
আজও এই আমার নবীন বার্ধক্যের নানান প্রহরে
ঝলসে উঠছ তুমি, কখনও কখনও
তোমার নিকট যাই, ছুঁই
তোমার শরীর গাঢ় অনুরাগে, জানি
মৃত্যুর পরেও আমি দেখব তোমাকে ভাবীকালে
যুগযুগান্তরে বংশধরদের উৎসুক দৃষ্টিতে।

শেষকথা
জীবন নদীর মতোই গভীর ও বহমান। নরসিংদীর পুরো জনপদকে ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এবং তাদের শাখা শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ, কলাগাছিয়া, হাড়িধোয়া, গঙ্গাজলী, কয়রা একেবারে মাকড়সার জালের মতো ঘিরে আছে নদীর বহমান ধারায়। এই নদীগুলোই নরসিংদীর প্রাণ, প্রাণের প্রবাহ। অথচ যে-নদীগুলো নরসিংদীর প্রাণ, নরসিংদীর জন-জীবনের প্রাণ, সেই নদীগুলো অনেক জায়গায় আজ মৃত। মানুষ ও প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় নদীর মৃত্যুঘণ্টা বাজছে। পয়ঃনালী, ড্রেনের দূষিত পানি, শিল্প ও কল-কারখানার বর্জ্য, লঞ্চ ও নৌ পরিবহনের জ্বালানি তেলের বর্জ্য নদীর পানিকে করেছে দূষিত। পাঁচদোনা-মাধবদীতে মৃত ব্রহ্মপুত্র’র ক্ষীণ প্রবাহে শিল্পবর্জ্য, হাড়িধোয়ার পানি ও মাটির দূষণ, শীতলক্ষ্যা-মেঘনার দূষিত পানি আমাদের নরসিংদীবাসীকে প্রতিনিয়ত কাঁদায়। একদিকে নদীর নাব্যতা কমছে, পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে নদী-পরিবেশ শিকার হচ্ছে দূষণের। নদী, নদীর মাটি, পানির প্রবাহ যেভাবে মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে, তা থেকে আমরা নদীকে বাঁচাতে চাই। বাঁচাতে চাই নরসিংদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং দীর্ঘকালে গড়ে ওঠা জনপদকে। আর সত্যিকার অর্থেই যদি তা চাই, তাহলে চিন্তা-ভাবনা বা অপেক্ষার এখন আর অবকাশ নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা মাথায় রেখে এখনই কাজে নেমে পড়তে হবে।


তথ্যসূত্র
১. মহেশ্বরদীর ইতিহাস, সুরেন্দ্রমোহন পঞ্চতীর্থ;
২. বাংলাদেশের নদ-নদী, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক;
৩. বাংলাদেশের নদীকোষ, ড. অশোক বিশ্বাস;
৪. বাংলাদেশের নদী, মোকারম হোসেন;
৫. ঢাকার ইতিহাস, যতীন্দ্রমোহন রায়;
৬. উয়ারী-বটেশ্বর : শেকড়ের সন্ধানে, সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান;
৭. নদী সংখ্যা ১৯৯৯-২০০০, মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক পত্রিকা;
৮. নরসিংদীর নদ-নদীর বিবরণ, আপেল মাহমুদ সাথী।


গোলাম মোস্তাফা মিয়া
সাবেক অধ্যক্ষ, নরসিংদী সরকারি কলেজ

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ