বাড়ৈআলগী
সেই আমলে এলাকায় জায়গা জমির জরিপ চলছিলো। কিন্তু সঠিক তথ্য না পাওয়ায় জমি রেকর্ডভুক্ত করতে সমস্যা হচ্ছিলো। এলাকার মুরুব্বিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অনেক মুরুব্বি অতীতের বর্ণনা দিতে পারতেন। তাদের মধ্যে ‘বাড়ৈ’ নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন। আবার আলগা থেকে হয়েছে ‘আলগী’। মুরুব্বি বাড়ৈ সাহেবের নামের সাথে ‘আলগী’ যোগ হয়ে হয়েছে ‘বাড়ৈআলগী’। অর্থাৎ তাদের এলাকাটি অন্যান্য এলাকা থেকে দূরবর্তী স্থানে স্বতন্ত্র বা আলগা ছিলো বলেই গ্রামের নাম বাড়ৈআলগী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর এখানে ‘বাড়ৈআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একসময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল মান্নান বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলেন।
তেলিয়া
এই এলাকায় ব্যাপক হারে হিন্দু লোকের বসবাস ছিলো। কারো একজন হিন্দু ভদ্রলোকের নাম ছিলো তৈলচন্দ্র ওরফে তেলাচন্দ্র। আর এই নাম হতেই হয়েছে তেলিয়া। এছাড়া একসময় এলাকাটিতে প্রচুর তৈলবীজ উৎপাদন হতো। ওই বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য এলাকায়ও সরবরাহ করা যেতো। সবচেয়ে উল্লেখ্য যে, এ-গ্রামে অনেক বড়ো একটি বটগাছ ছিলো। বটবৃক্ষটি দীর্ঘ বছর ধরে এলাকাসহ পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। ইতিহাসের সাক্ষী গাছটি এখন আর আগের মতো না থাকলেও এর ধ্বংসাবশেষ পথযাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই বটগাছের কারণে স্বর্গগত তৈলচন্দ্রের তেলিয়া গ্রাম শিবপুর ও নরসিংদীতে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে।
ঝাউয়াকান্দী
গ্রামের নাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও এলাকাবাসী মনে করে, একসময় এখানে অনেক অনেক ঝাউ গাছ জন্মাতো। ঝাউ গাছ একপ্রকার সূচাগ্র ও রমণীয় সুন্দর বৃক্ষ বিশেষ। গাছের শাখা-প্রশাখা দেখতে খুবই সুন্দর। সারিবদ্ধ ঝাউগাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আর এ-সমস্ত ঝাউগাছের কারণেই গ্রামের নাম ঝাউয়াকান্দী হয়েছে। এ গ্রামে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ঝাউয়াকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯২৩ সালে মোলভী সুবেদ আলী পণ্ডিত ও মরহুম খিদির বক্স এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সুবেদ আলী সাহেব নিজেই জমি দিয়েছিলেন। দক্ষিণমুখী বিদ্যালয়ের বর্তমান অবকাঠামোগত অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মনোহরদীর গোতাশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব ওসমান গণি মাস্টার, জনাব নাসির উদ্দীন মোল্লা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। দুইটি গ্রামের নামে সমৃদ্ধ তেলিয়া ঝাউয়াকান্দী উচ্চ বিদ্যালয় ইতোমধ্যে এলাকার শিক্ষায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
লেখক : সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার