মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্ত : প্রকৃতি ও পাখির ডানায় যার মনন

শিপ্ত। মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্ত। পেশায় একজন উদ্যোক্তা এবং ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার। ফটোগ্রাফিটা মাথায় নেশার মতো চেপে বসার শুরুটা ২০১৩ সালের মাঝামাঝি। ছোটোবেলায় বাবা পাখি পুষতেন। তখন থেকেই পাখির প্রতি একটা অনন্য ঝোঁক ছিলো তার। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে ঢুকে পড়ার মূল রসদটা হয়তো সেটাই ছিলো। আর সেই সুবাদে পশুপাখি ও প্রকৃতির দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের অনেক জেলায়। এই শখের প্রতি অকুণ্ঠ ঝোঁক আর নেশা তাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে বাংলার চেনা-অচেনা চর, খাল-বিল, জঙ্গল আর নানা জলাভূমিতে। একেকটা ছবির জন্যে কতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্গম পথে চলা, জলায়-কাঁদায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা, কতো আঁচড়, কতো পোকামাকড়ের কামড়, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত একটা ক্লিক সেসব কষ্টকে একদম ম্লান করে দেয়। নতুন নতুন পাখির জীবন বৈচিত্র্য জানার পাশাপাশি তাদের ক্যামেরাবন্দী করার উন্মত্ত আকাঙ্ক্ষা তাকে সাহায্য করেছে প্রায় তিনশো প্রজাতির পাখির ছবি তুলতে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, ক্রমে এই সংখ্যাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে, ছবিতেও উঠে আসবে জীবন ও প্রকৃতির নানা বৈচিত্র্যের রূপকথন। অবশ্য এই স্পৃহা থেকে ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজ কর্মের ছাপ ফেলতে সমর্থ হয়েছেন এই গুণী শিল্পী, জয় করে এনেছেন বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বঙ্গবন্ধু ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার ২০১৯, Photocrowd International ২০১৮, D’ Photocafe WNI World Photography Exibition ২০১৭-সহ আরো অসংখ্য সুকীর্তির স্বাক্ষরে পরিপূর্ণ তার সঞ্চয়ের ঝুলি। বিভিন্ন সময়ে The Daily Observer, ইত্তেফাক, প্রথম আলো-সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায়ও এসেছে তার নাম।

ছবি তোলা এবং ছবির অর্জনগুলোর বেশিরভাগই ছিলো ছাত্রজীবনের। চাকুরিজীবনে প্রবেশের সাথে সাথে শখের জায়গাটা ধরে রাখা ক্রমশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। কিন্তু তার মন তো পড়ে থাকে সেই জলে-জঙ্গলেই। একটা সময় আর মনের সাথে পেরে ওঠতে পারলেন না। চাকুরি ছেড়ে দিলেন আর নিজেকে উন্মোচিত করলেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। এতে করে শখের কাজেও পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন। বর্তমানে নরসিংদীর ইটাখোলায় প্রায় ১০০ জন প্রতিবন্ধী নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি বিশ্বমানের কারু এবং হস্তশিল্প কারখানা, যেখানে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন উপকরণ তৈরির সাথে সাথে অসংখ্য প্রতিবন্ধী আয়-রোজগার করছেন। নিজেদের অচলাবস্থার নির্মম পরিণতি আর অসহনীয় যন্ত্রণা কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারছেন।

ফটোগ্রাফি মূলত একধরনের স্মার্ট শখ। এই শখের জায়গাটা পাকা করতে এবং ছবিপ্রেমী আরো অসংখ্য তরুণকে আলোকচিত্রের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে ২০১৯ সালে বেশ কয়েকজন উদ্যমী তরুণ-তরুণী নিয়ে গড়ে তোলেন ‘নরসিংদী ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’। ইতোমধ্যে দুটি বেশ বড়োসড়ো চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন তারা সফলভাবেই সমাপ্ত করতে পেরেছে।

এই সবকিছুর পাশাপাশি ছোটো ভাই এবং বন্ধুদের নিয়ে গড়া একটা ইভেন্ট ফটোগ্রাফির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার। আলাপচারিতায় নিশ্চিত বুঝতে পারি, প্রকৃতপক্ষেই একজন পাখি ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ তিনি। বর্তমান প্রকৃতির অস্থিতিশীল অবস্থার দরুন অনেকটা উদ্বিগ্ন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমগ্র পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণতা লাগামহীন বেড়ে চলেছে। এমন যদি চলতে থাকে, তাহলে একদিন দেখা যাবে, প্রকৃতিও তার মুখ ফিরিয়ে নেবে, নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের ইকোসিস্টেম। তিনি বলেন, “২০১৩-১৪ সালেও যেসব পাখি এ-দেশে দেখা যেতো, তাদের অনেকগুলোই এখন বিলীন। অনেক প্রজাতি চোখে পড়ে না আর। আবার অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব শঙ্কার মুখে। তাই বেশি বেশি পাখিবান্ধব গাছ রোপণ করে পরিবেশের প্রতি আরো যত্নশীল হওয়া খুবই জরুরি।”  মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্ত এখনো স্বপ্ন দেখেন, এই বাংলা আবারো সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠবে; আর তার পথে-প্রান্তরে, জলে-জঙ্গলে তিনি দাপিয়ে বেড়াবেন বিচিত্র সব পশু-পাখির ছবি তোলার জন্যে।

এবারে দেখে নেয়া যাক মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্তর ক্যামেরায় ধারণ করা বিচিত্র কিছু পাখির আলোকচিত্র, যা তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে তুলে এনেছেন।

লাল ঠেঙি
উল্টোঠুঁটি
বাবুই বাটন
তিলা বাজ
মাছরাঙা
উদয়ী ধলা-চোখ
মৌটুসী
লাল মুনিয়া
ছোটো জিরিয়ার বাচ্চা
সবুজ সুইচোরা
টিয়া

মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্ত

    জন্ম | ১১ আগস্ট ১৯৯৫, ঘাগটিয়া, শিবপুর
বসবাস | মুন্সেফেরচর, ইটাখোলা, শিবপুর
   পেশা | উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার

ফেসবুক________
mostafijur.rahman.shipto
shiptophotography

ইনস্টাগ্রাম________
mostafij_shipto

ফ্লিকআর________
142386798@N08

পিন্টারেস্ট________
mostafijurrahmanshipto

ই-মেইল________
mustafizshipto07@gmail.com

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ