বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের আয়োজনে সদ্যপ্রয়াত লেখক ও চিন্তক রিপন ইউসুফকে নিয়ে স্মরণসভা

সদ্যপ্রয়াত লেখক ও চিন্তক রিপন ইউসুফ স্মরণে ‘কবি-গল্পকার-চিন্তক রিপন ইউসুফ-এর স্মরণসভা’ শীর্ষক এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে ‘বাঙলাদেশ লেখক শিবির, নরসিংদী’। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (শুক্রবার) দুপুর ৩ টায় নবধারা প্রি-স্কুলে অনুষ্ঠানটি আরম্ভ হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন ‘বাঙলাদেশ লেখক শিবির, নরসিংদী’র সভাপতি জনাব নাজমুল আলম সোহাগ।

শুরুতেই সদ্যপ্রয়াত লেখক-বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর, লেখক-গবেষক যতীন সরকার, প্রখ্যাত লালনসঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীন এবং লেখক রিপন ইউসুফের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।

নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা মিয়া, কবি ও সম্পাদক সুমন ইউসুফ, কবি ও ঔপন্যাসিক শাদমান শাহিদ, কবি হাসনাইন হীরা, কবি আল মনির, কবি ও প্রকাশক মোশাররফ মাতুব্বর, কবি এমরানুর রেজা, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী মঈনুল ইসলাম মীরু, প্রয়াত রিপন ইউসুফের পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনসহ আরো কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্তের নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতিকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় সকলেই রিপন ইউসুফের সাহিত্য, দর্শন, চলচ্চিত্র ভাবনা, সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ে আলোকপাত এবং লেখকের সাথে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন।

কবি হাসনাইন হীরা জানান, “রিপন ইউসুফ আমার বন্ধু, আমার ভাই, আমার সহযাত্রী। শিল্প-সাহিত্যের নানা অলি-গলির ভেতরে তার সাথে সম্পৃক্ত থেকেছি। নানা বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করেছি। বাংলা অঞ্চল নিয়ে গভীর চিন্তা করতেন রিপন ইউসুফ। ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়ে অনেক কৌতূহল এবং কাজ ছিলো তার।”

অধ্যাপক জহির মৃধা বলেন, “রিপন সর্বদা চিন্তাশীল মানুষ ছিলো। সিআইডিপি রোগে অনেকদিন আক্রান্ত ছিলো। তার মৃত্যু আমাদের খুব কাঁদায়, আমাদের খুব ভাবায়।”

কবি আল মনির বলেন, “তার যে বহুমুখী প্রতিভা, এটা সবার মধ্যে থাকে না। এ-ধরনের প্রতিভা আমাদের সমাজে কম।”

কবি এমরানুর রেজা জানান, “জন্মানোর সাথে সাথে আমাদের জন্য অনিবার্য হয়ে যায় মৃত্যু, আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। আদর্শগত দিক থেকে রিপন ইউসুফ অত্যন্ত মার্জিত ও সুন্দর ছিলেন। তার আদর্শের জায়গা থেকে কলমকে কখনো বিক্রি করেন নাই। তিনি আত্মমগ্ন মানুষ। রিপন ইউসুফ কখনো হারাবেন না।”

শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী মঈনুল ইসলাম মীরুর বক্তব্য ছিলো, “রচনার সংখ্যা দিয়ে কবিকে বিচার করা যায় না। রিপন ইউসুফ চিন্তক মানুষ, স্বল্পভাষী মানুষ। …সে নিঃসন্দেহে ভালো লেখক।”

কবি ও সম্পাদক সুমন ইউসুফ  বক্তব্যে বলেন, “রিপন ইউসুফের সাথে এক দশক চলেছি। সে সংগঠনে বিশ্বাস করতো না। ব্যাপক সংগঠনবিমুখ ছিলো। আবার সমাজ ও রাষ্ট্রে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু, সে-বিষয়ে তার সম্যক ধারণা ছিলো।”

প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়া বলেন, “সত্যিকার অর্থে তার মৃত্যুটা অকালমৃত্যু। যখন চিন্তায়-দর্শনে পরিপক্বতা সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা তাকে হারিয়েছি। …তার সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলাম চিন্তার জায়গা থেকে। আমাদের তার চিন্তার জায়গাটুকু আলাদাভাবে আলোচনা করা দরকার। রিপন বেঁচে থাকবে তার সৃষ্টি ও কর্মের মাধ্যমে।”

তাছাড়া শিক্ষক শাহজাহান, সংস্কৃতিকর্মী মাইনুল রহমান খান, কবি ও প্রকাশক মোশাররফ মাতুব্বর, কবি মমিন আফ্রাদ, কবি শাহ আলম, কবি নাজমুল শাহরিয়ার, কবি ইফতেখার, কবি আল সউদ, রিপন ইউসুফের বড়ো ভাই রাসেল ওয়ালিদসহ আরো অনেকে কথা বলেন। পাশাপাশি রিপন ইউসুফের রচিত কবিতা, গল্প ও অনুবাদের বিভিন্ন অংশ পাঠ করা হয়৷

প্রসঙ্গত, রিপন ইউসুফ ছিলেন নরসিংদীর টাউয়াদীতে বসবাসকারী একজন নিবেদিতপ্রাণ কবি, গল্পকার এবং চিন্তক। তার বেশকিছু কবিতা, গল্প, অনুবাদ, রিভিউ, রাষ্ট্র-সমাজ বিষয়ক ভাবনা, চলচ্চিত্র বিষয়ক গদ্য জাতীয়-স্থানীয় বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন সিআইডিপি নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। গত ১৯ জুলাই ২০২৫ (শনিবার) বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ