২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বাংলা সাহিত্যের আকাশ থেকে ঝরে পড়ে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তি, শোষণ, গণজাগরণ, স্বৈরশাসকের নেতিবাচক ক্ষমতাচর্চাকে ছন্দে-কথায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলেন কবিতায়। সেই কবি শামসুর রাহমানের ১৯তম প্রয়াণ দিবস ছিলো গতকাল। কবির প্রয়াণ দিবসে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, নরসিংদী কর্তৃক ‘বিধ্বস্ত নীলিমায় শামসুর রাহমান স্মরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ১৭ আগস্ট (রবিবার) নরসিংদী প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় সভাটি। উক্ত সভায় বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনু, নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা মিয়া, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, নরসিংদীর সাধারণ সম্পাদক কবি মহসিন খোন্দকার, কবি মমিন আফ্রাদ, টিইও নুরুদ্দীন দরজী, কবি ও গবেষক ফারহান ইশরাক, জাকির হোসেনসহ অনেকে আলোচনা উপস্থাপন করেন। তাছাড়া বাংলাদেশ ও নরসিংদীর বিভিন্ন অঞ্চলের কবি, শিক্ষক, প্রভাষক, সংস্কৃতিকর্মী, আবৃত্তিশিল্পী, ছাত্র, সাংবাদিক, গায়ক উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম আরম্ভ হয় বিকাল তিনটায়। শুরুতেই মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা শিশুদের জন্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। হাসান মাহমুদ সনেটের মাধুর্যপূর্ণ সঞ্চালনার পাশাপাশি শামসুর রাহমানের বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করেন জেলার আবৃত্তিশিল্পীরা।
আলোচনা পর্বে আলোচকেরা কবির কাব্যসত্তা, চিন্তাসত্তা, ব্যক্তিজীবন, পেশা, মনন, কবিতা, সমাজ-রাষ্ট্রেচিন্তা, মানবতাবোধের বিস্তারিত আলোচনা করেন। সূচনা বক্তব্যে কবি মহসিন খোন্দকার বলেন, “শামসুর রাহমানই একমাত্র কবি, যিনি জীবনানন্দ দাশের পরে বাংলা সাহিত্য ও কাব্যকে বেগবান করেছেন, আধুনিক করেছেন। রাজনীতির সংগ্রামকে কবিতার মধ্যে আরো কাব্যিকভাবে প্রকাশ করেছেন।”
শিক্ষক-এক্টিভিস্ট-সংস্কৃতিকর্মী ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নরসিংদীর আহ্বায়ক নাজমুল আলম সোহাগ বলেন, “শামসুর রাহমান কবি হিসেবে প্রধান।”
কবি ও গবেষক ফারহান ইশরাক বলেন, “কবি শামসুর রাহমান এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন, যা সেই সময়কার ক্ষমতা-কাঠামোর সঙ্গে একটি সাযুজ্যপূর্ণ এবং গভীর আন্তঃসম্পর্ক তৈরির জন্য অনুকূল ছিলো না।”
নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা মিয়ার মতে, “শামসুর রাহমান কি শুধু স্বাধীনতার কবি? আমি মনে করি, তাঁর সৃষ্টির সাথে সেভাবে পরিচিত হয়েই তাঁকে ধারণ করতে হবে।”
বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনু বলেন, “শামসুর রাহমানই একমাত্র কবি, পঞ্চাশ-ষাট বছরে যিনি তাঁর আদর্শ-চিন্তা-চেতনার জন্যে বারবার পদ-পদবী বদলাননি।”
বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, নরসিংদীর সভাপতি এবং উক্ত অনুষ্ঠানেরও সভাপতি কবি ও সম্পাদক সুমন ইউসুফ বলেন, “তাঁকে স্মরণ করছি এমন একটা সময়ে, যখন রাষ্ট্র-সমাজ বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে, নানান মাত্রিকতায় বিধ্বস্ত।”
তাছাড়া তরুণ কবি মমিন আফ্রাদ, কবি হাসনাইন হীরা ও জাকির হোসেন প্রমুখ তাদের আলোচনা রাখেন দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে।
আলোচনার পাশাপাশি আবৃত্তিশিল্পী অরিত্রী বিহঙ্গ, কারিমা পুষ্পিতা, চিত্রা বিশ্বাসসহ আরো কয়েকজন শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা’, ‘আসাদের শার্ট’, ‘পান্থজন’সহ আরো বেশ কিছু কবিতা আবৃত্তি করে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে তোলেন।