নেতাজির অনুগামী, শুভাকাঙ্ক্ষী আর পৃষ্ঠপোষকের কোনো অভাব ছিলো না পূর্ববঙ্গে। এর মধ্যে একজন ছিলেন নরসিংদীর জমিদার ললিতমোহন রায় বিএবিএল। তিনি ছিলেন নেতাজির ভাইপো ডা. শিশির কুমার বসুর শ্বশুর। অর্থাৎ কৃষ্ণা বসুর নানা। একজন শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে ললিতমোহন ছিলেন ভারতবর্ষব্যাপী পরিচিত। বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলার এক নম্বর আসামী ছিলেন। তিনি ছিলেন কলকাতা বেঙ্গল ল্যাম্পসের প্রতিষ্ঠাতা। উক্ত ল্যাম্প কারখানা ছিলো ভারতবর্ষের বৈদ্যুতিক বাল্ব উৎপাদনকারী প্রথম প্রতিষ্ঠান।
এলগিন রোডের বসু পরিবার, নরসিংদীর সাটিরপাড়ার রায় জমিদার বাড়ি আর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর চৌধুরী পরিবার একে অপরের আত্মীয় ছিলো। নরসিংদীর জমিদার ললিতমোহন রায়ের মেয়ে ছায়া দেবীর বিয়ে হয়েছিলো নীরদ সি চৌধুরীর ভাই চারুচন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে। অপরদিকে তাঁদের মেয়ে কৃষ্ণা বসুর সম্বন্ধ হয় সুভাষচন্দ্রের বড়ো ভাই শরৎচন্দ্র বসুর ছেলে ডা. শিশির কুমার বসুর সঙ্গে। তাঁদের সন্তান সুগত বসু, শর্মিলা বসু, ও সুমন্ত্র বসু। কৃষ্ণা বসুর জন্ম তাঁর দাদু (মাতামহ) ললিত রায়ের ঢাকাস্থ লক্ষ্মীবাজারের বাড়িতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর। শিশির বসুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিলো ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি ৮১ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।
অনেকে মনে করেন, আত্মীয়তা সূত্রে নেতাজির সঙ্গে ললিতমোহন রায়ের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো। কোনো কোনো গবেষক যুক্তি দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, একই আদর্শের রাজনীতির কারণেই সুভাষচন্দ্র তাঁর ভাইপোকে ললিতমোহনের নাতনীকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাছাড়া ডা. শিশির বসুর বাবা শরৎ বসু স্বাধীনতাপ্রেমী ও কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ট ছিলেন। ললিতমোহনও একই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র আর ললিতমোহনের রাজনীতি একই সূত্রে গাঁথা ছিলো। দুজনেই কংগ্রেসের রাজনীতি করলেও বিশ্বাস করতেন, সশস্ত্র আন্দোলন ছাড়া এই দেশ থেকে উপনিবেশবাদী ব্রিটিশদের তাড়ানো সম্ভব নয়। আলোচনার টেবিলে বসে চা-নাস্তা খাওয়ার নামে রাজনীতি করলে স্বাধীনতার পথ আরো দীর্ঘায়িত হবে। যার কারণে সশস্ত্র বিপ্লবে জড়িত বিভিন্ন দল— যেমন : অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর পার্টি, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স, সূর্যসেনের দল (ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি) প্রভৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন দুজনেই। নেতাজি তো দেশ ছেড়েছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করার জন্যে।
ললিতমোহন রায় আইনজীবী হিসেবে ঢাকা ও নারায়ণঞ্জ বারের নেতৃত্ব দিলেও তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিলো দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। সেজন্যে তিনি নিজে স্বদেশি স্টিমার কোম্পানি খুলেছিলেন। এর মূল অফিস ছিলো নারায়ণগঞ্জে। ব্রিটিশ মালিকানাধীন স্টিমার কোম্পানিকে টেক্কা দেবার জন্যেই তিনি সেটা করেছিলেন। স্বদেশি জাহাজে যাত্রী পরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অনেক বিপ্লবীদের চাকুরি দেয়া হয়েছিলো। তাঁরা সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে জাহাজে চলে যেতেন। পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বিপ্লবীদের পেতো না। প্রখ্যাত বিপ্লবী মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ললিতমোহন রায়ের প্রতিষ্ঠিত স্বদেশি স্টিমারে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন।
ললিতমোহন রায় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পিতা কালী কুমার রায়ের নামে সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন নামে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লেখাপড়ায় স্কুলটি সুনাম অর্জন করে। এরচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের কারণে। উক্ত স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি শরীরচর্চা, লাঠি খেলা ও ছোরা চালনা শেখানো হতো। স্কুলের শিক্ষক মহিমচন্দ্র নন্দী, ছাত্র মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, সতীশচন্দ্র পাকড়াশী প্রমুখ অনুশীলন সমিতির শাখা গড়ে তুলেছিলেন স্কুলে। ফলে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা এসব কর্মকাণ্ডের রিপোর্ট দেয় ঊর্ধ্বতন মহলে। এতে ব্রিটিশ প্রশাসন ক্ষুব্ধ হয়ে সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশনের সরকারি অনুদান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এসব বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের মূল উৎসাহদাতা ছিলেন জমিদার ও আইনজীবী ললিতমোহন রায়। তিনি স্কুলের যে-আবাসিক ছাত্রাবাস ও শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মাণ করেছিলেন, সেখানে বিভিন্ন বিপ্লবীদের লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা করতেন। এমনকি তিনি তাঁর জমিদার বাড়ির অনেককে বিপ্লবী দলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তেমন একজন বিপ্লবী সুনীল বরণ রায়, যিনি পরবর্তীতে হুগলির চন্দননগরের গভর্নর হয়েছিলেন। জমিদার ললিতমোহন রায়ের ঘনিষ্ঠ কবিয়াল হরিচরণ আচার্য্য বহু স্বদেশি গান গেয়ে মানুষদের সচেতন করতেন।
অতীতে মহেশ্বরদী পরগণা ছাড়াও ভাওয়াল পরগণার কিছু এলাকায় তাঁর জমিদারি এস্টেট ছিলো। তিনি তাঁর পুরো জমিদারিতে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় শুধুমাত্র মহেশ্বরদী পরগণাতেই পঞ্চাশটি বিপ্লবী আখড়া গড়ে ওঠেছিলো, যেগুলোর নেতৃত্বে ছিলো অনুশীলন সমিতি। বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষা নেবার জন্যে তাঁরা চিনিশপুর কালী মন্দিরকে বেছে নিয়েছিলেন। জঙ্গলাকীর্ণ সেই কালী মন্দিরটি জনমানবহীন থাকতো। এই সুযোগে বিপ্লবীরা সেখানে গিয়ে নিজের রক্তে তিলক এঁকে কালীমূর্তির সামনে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার দীক্ষা গ্রহণ করতেন। বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ললিতমোহন রায়ের নাম গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিলো। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের হবার পর। ব্রিটিশ সরকারকে উৎখাতের জন্যে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগ এনে এই মামলা দায়ের হয় ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে।
ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে এই মামলার অন্যতম আসামী মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী তাঁর লেখা ‘জেলে ত্রিশ বছর ও পাকভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, উক্ত মামলার আইনজীবী ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। তিনি মামলা উপলক্ষে কলকাতা থেকে ঢাকা আসতেন। ব্যারিস্টার দাসের আগমন উপলক্ষে ঢাকায় বিপ্লবীদের শোভাযাত্রা হতো। যখন জেলখানা থেকে বিপ্লবীদের কোর্টে আনা হতো, তখন তাঁদের গাড়ি ঘিরে শত শত বিপ্লবী পদযাত্রা করতো। দুই বছর ধরে চলা মামলাটির মূল তদারককারি ছিলেন সাটিরপাড়ার জমিদার ললিতমোহন রায়।
জমিদারি, স্টিমার ব্যবসা ও আইন পেশার বাইরেও ললিতমোহন রায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে মনোযোগ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করাকে তিনি দেশপ্রেম মনে করতেন। এক্ষেত্রে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রখ্যাত স্বদেশি নেতা ও বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায়। একদিন প্রফুল্লচন্দ্র জমিদার ললিত বাবুকে দেখে বললেন, জমিদারির পাশাপাশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। দেশ শিল্পে সমৃদ্ধ না হলে স্বাধীনতা লাভ করে পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে না। কথাটি ললিত বাবুর বেশ মনে ধরলো। তাই তিনি চিন্তা-ভাবনা করে দুই ছেলেকে প্রযুক্তিবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্যে আমেরিকা ও জার্মানিতে পাঠান। ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, লেখক ও কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণা বসু ‘হারানো ঠিকানা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ললিতমোহন রায় তাঁর মেজো ছেলে সুরেন্দ্রকুমার রায়কে আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পাঠান। কিরণ রায়কে পাঠানো হলো কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-তে। সুরেন রায়কে পাঠানো হলো জার্মানিতে, ইলেকট্রিক প্রযুক্তিতে মাস্টার্স করার জন্যে। সেটা ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। ছেলেরা বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর ললিতমোহন রায় তাঁদেরকে কলকাতায় একটি ল্যাম্প কোম্পানি খোলার নির্দেশ দিলেন। উক্ত কোম্পানির নামকরণ করেন ‘বেঙ্গল ল্যাম্পস লিমিটেড’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ল্যাম্প কারখানা স্থাপিত হয়। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ নামের আদলে কোম্পানির নাম রাখা হয়। বেঙ্গল ল্যাম্পস প্রতিষ্ঠার আগে কলকাতার বৈদ্যুতিক বাতির বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বৈদ্যুতিক বাতির কোম্পানি ‘ফিলিপস’। সেই ফিলিপসকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যায় স্বদেশি বাল্ব তৈরির কারখানা বেঙ্গল ল্যাম্পস। কলকাতার যাদবপুর, কসবা, বেহালা ছাড়াও ব্যাঙ্গালোরে বেঙ্গল ল্যাম্পসের কারখানা স্থাপিত হয়। বিদেশি কোম্পানিকে পেছনে ফেলে একটি স্বদেশি কোম্পানির এগিয়ে যাবার বিষয়টি সে-সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেছিলো। নরসিংদীর জমিদার ললিতমোহন রায় এবং হেমেন রায় মিলে যে-সাফল্য অর্জন করেন, তা দেখে অনেক বাঙালি ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও বৃহৎ শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার জন্যে এগিয়ে এসেছিলেন।
কৃষ্ণা বসুর বিবরণ থেকে জানা যায়, কিরণ রায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ছিলেন। পরে বেঙ্গল ল্যাম্পস প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু হিমালয় ভ্রমণ করতে গিয়ে তুষারপাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছিলো। সুরেন রায়ও যাদবপুর কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবং পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সুরেন ও হেমেন রায় বেঙ্গল ল্যাম্পস ফ্যাক্টরির পাশেই সুসজ্জিত বাসভবন নির্মাণ করে বসবাস করতেন।
জানা যায়, দেশভাগ ও অব্যাহত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পূর্ববঙ্গ থেকে হাজার হাজার হিন্দু পরিবার পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তার বড়ো একটি অংশ দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর এলাকায় উদ্ধাস্তু হিসেবে বসবাস করতে থাকে। তাদের জন্যে ভারত সরকার সেখানে বেশকিছু উদ্ধাস্তু কলোনি প্রতিষ্ঠা করে দেয়। তখন বেঙ্গল ল্যাম্পসের পক্ষ থেকে উদ্ধাস্তুদের নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়।
এর প্রতিদানও পেয়েছে ললিতমোহন রায়ের আত্মীয়-স্বজনেরা। নাতনি কৃষ্ণা বসু বারবার সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন যাদবপুর আসন থেকে। তাঁর ছেলে সুগত বসুও একই আসন থেকে জয় লাভ করেন। এর নেপথ্যে বেশকিছু কারণ ছিলো। প্রথম তিনটি কারণ হলো : এক. কৃষ্ণা বসু ও সুগত বসু নেতাজি সুভাষচন্দ্রের পারিবারিক লোক; দুই. দাদু (মাতামহ) ও তাঁর সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল ল্যাম্পসের সুনাম; তিন. যাদবপুর এলাকার সিংহভাগ মানুষ পূর্ববঙ্গের উদ্ধাস্তু, যাদের বড়ো একটি অংশ স্বাধীনতা যুদ্ধে বিপ্লবী দলের সদস্য হিসেবে নেতাজি ও ললিতমোহনকে শ্রদ্ধা করতেন।
কৃষ্ণা বসু প্রথম কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম যাদবপুর কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৮ ও ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একই আসনে সাংসদ হিসেবে জয়লাভ করেন। মায়ের আসন থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে সুগত বসু ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সাংসদ হন। তিনি একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী পরে আর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আগ্রহ দেখাননি। তারপর কবির সুমন ও মিমি চক্রবর্তী যাদবপুর থেকে সাংসদ হন। নেতাজিকে নিয়ে সুগত বসুর ইংরেজি ভাষায় গবেষণা রয়েছে।
কৃষ্ণা বসু দীর্ঘ ৪০ বছর কলকাতার খ্যাতনামা সিটি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। কিছুদিন অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তবে লেখালেখিতে তিনি বেশি সুনাম অর্জন করেছেন। নেতাজি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা পাঠকের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। লিখেছেন একাধিক স্মৃতিকথা বিষয়ক গ্রন্থ। গ্রন্থগুলো হলো— ইতিহাসের সন্ধানে, এমিলিয়ে ও সুভাষ : এক অনন্য সম্পর্কের কাহিনি, পার্লামেন্টের অন্দরমহলে, চরণরেখা তব, প্রবন্ধ সংগ্রহ (১৯৫১-২০২০), প্রসঙ্গ সুভাষচন্দ্র, ছোটদের নেতাজি, হারানো ঠিকানা, ১৯৪৭ স্মৃতি-বিস্মৃতি, ভ্রমণ দেশে দেশে, এক নম্বর বাড়ি প্রভৃতি।
লেখালেখির পাশাপাশি কৃষ্ণা বসু নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর প্রধান ছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি সুভাষ বসুর রাজনৈতিক আদর্শ ও দেশপ্রেমের ভাবনা-চিন্তাকে প্রসারিত করেছেন। সাংসদ থাকাকালে তিনি পার্লামেন্টরি স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান, কমিটি অন অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কমিটির সদস্য ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সবার কাছ থেকে মাতৃসম সম্মান পেতেন।
লেখালেখির জন্যে কৃষ্ণা বসু প্রতিশ্রুতি পুরস্কার, সোপান পুরস্কার, শক্তি চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার, উত্তর পথ পুরস্কার, কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার, উৎসব পুরস্কার, আল্পনা আচার্য স্মৃতি পুরস্কার ও রাইটার ইন রেসিডেন্স সম্মাননা লাভ করেন। একজন কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও তিনি খ্যাতনামা ছিলেন। নিয়মিত লিখতেন আনন্দবাজার, সংবাদ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় কলাম লিখে বেশ সুনাম অর্জন করেন।
আপেল মাহমুদ
সাংবাদিক, গবেষক ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগ্রাহক