আবদুল্লাহ আল মামুনের সাক্ষাতকার

আবদুল্লাহ আল মামুন। নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সাবেক সভাপতি। বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (BTMA)-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নরসিংদীর স্বনামধন্য একজন শিল্প-উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। গত ২৭ এপ্রিল ২০২৫ (রবিবার) তার সাথে বিস্তারিত কথা হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের সাম্প্রতিক হালচাল নিয়ে। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন সম্পাদক সুমন ইউসুফ।

আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আসলে কীরকম চলতেছে এখন? নরসিংদীসহ সারা বাংলাদেশের? প্রশ্নটি করার কারণ হলো, সরকার পরিবর্তন হলো প্রায় নয় মাস হয়ে গেছে। বিগত সরকারের একধরনের পলিসি ছিলো, বর্তমান সরকার পলিসি পরিবর্তন করেছে কি না, করলে সেটা কীরকম? আপনার কী মনে হয়?

আবদুল্লাহ আল মামুন : দেখেন, বর্তমানে যে-ব্যবসায়িক পরিবেশ-প্রতিবেশ বিদ্যমান, এখানে ব্যাকরণগত যে-ব্যবসা হওয়া উচিত, সেটা হচ্ছে না। এখন ব্যবসায়ীরা আসলে ম্যানেজ করছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যার যার ব্যবসাটা আমরা ম্যানেজ করছি। সেখানে নানা ধরনের অসঙ্গতি আছে। যেমন ধরেন, ব্যাংকিং সেক্টর, সেখানে ঋণের প্রাপ্যতা নিয়ে ব্যাপক সংকট আছে, ডলারের একটা সংকট আছে। তাছাড়া গ্যাসের একটা সংকট আছে, ইলেকট্রিসিটির সংকট আছে, শ্রমবাজারে সংকট আছে। আবার আন্তর্জাতিক বিশ্বে নানা ধরনের কনফ্লিক্ট আছে। তাই আমার মনে হয়, বাংলাদেশ একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এটাকে সংজ্ঞায়িত করা একটু ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে। তবে একটা বিষয় বলতে হবে যে, বিগত রেজিমের যে-অব্যবস্থাপনা ছিলো, অর্থনৈতিক সেক্টরে সেগুলোর রি-কনস্ট্রাকশনের একটা চেষ্টা চলছে। আমার মনে হয় যে, এই ধারাবাহিকতা যদি কিছুদিন চলে, তাহলে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে ব্যবসা-বাণিজ্য, যেখান থেকে আমরা আসলে পরিকল্পনা করতে পারবো। এখনো আমরা বাংলাদেশের ইকোনোমিক গ্রোথের প্ল্যান করতে পারছি না। এখন আমরা সাসটেইন করছি, একটা জায়গায় যাবো বলে আশা করছি, সেখানে পৌঁছালেই আমরা প্ল্যান করতে পারবো। আশা করছি, এই বছরের শেষে আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁছে যাবো, যেখান থেকে আমরা গন্তব্য ঠিক করতে পারবো।

তাহলে আপনি মনে করছেন, বর্তমান সরকার আমাদের এমন একটা আশা বা সাফল্য দেখাচ্ছে?

আবদুল্লাহ আল মামুন : ইয়েস, আমরা আশান্বিত। কেননা, কিছু কিছু সেক্টরে চুরি বন্ধ হয়েছে। এটা একটা বড়ো প্রাপ্তি আমাদের। আপনি জানেন যে, একধরনের লুটপাট চলছিলো ব্যাংকিং সেক্টরে। এটা বন্ধ হয়েছে এবং এটা যদি স্থায়ী হয়, তাহলে আমাদের সম্পদ-সঞ্চিতি বাড়বে। সেখান থেকে আমাদের প্রান্তিক জনগণের কাছে আমাদের পুঁজি পৌঁছে যাবে বলে আমরা মনে করি। এটা সর্বজনবিদিত যে, বিগত সরকার উন্নয়নের নামে নানা ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়ে গিয়েছিলো। এবং এটি একটি-দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে না, জাতিগতভাবে সারা দেশের সকল পর্যায়ের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিলো। সবাই কোনো-না-কোনোভাবে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলো। এই জিনিসটা কাটঅফ হয়েছে। আশা করছি, আগামী দিনে একটা অবস্থান তৈরি হবে, যেখান থেকে আমরা নতুন করে শুরু করতে পারবো।

আগামীতে আবার নতুন দল বা গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসীন হবে, তখন কি এসব রক্ষা করা সম্ভব হবে? নাকি বর্তমান উপদেষ্টা সরকারকেই একটা পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দিকে ধাবিত হতে হবে?

আবদুল্লাহ আল মামুন : এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। আগামী দিনে নতুন একটা সরকার আসবে, কারা আসবে, তারা ধরে রাখতে পারবে কি না, সেটা এই মুহূর্তে প্রেডিক্ট করাটা বড়ো কঠিন। তবে একটি কথা বলতে চাই, প্রত্যেকটা উন্নত দেশকে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই কিন্তু যেতে হয়েছে। ইউএসএ, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান— যারাই উন্নত হয়েছে, তারা একদিনে সেই জায়গায় যায় নাই। তাদেরও কিন্তু আমাদের মতো এই টার্মোয়েল পার হয়েই যেতে হয়েছে। যুগের পর যুগ যুদ্ধ হয়েছে। তো এই ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহ-বিচ্যুতি পার করেই কিন্তু একটা দেশকে এগিয়ে যেতে হয়। আমার মনে হয়, রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেই সময়টা পার করছে। এসব রি-কনস্ট্রাকশনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দেশে রূপান্তরিত হবে।

আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের একটা বৃহৎ সম্পর্ক ছিলো। এখন বর্তমান সরকার এবং জনগণের ভারতের প্রতি যে-বৈরী মনোভাব জন্মেছে, পাশাপাশি সরকারের পাকিস্তানের প্রতি একধরনের প্রীতি জন্মেছে, পাকিস্তানের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন ধারা উন্মুক্ত হচ্ছে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির এই স্থানবদলের নিরিখে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন?

আবদুল্লাহ আল মামুন : ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। আমি দেখেছি, যারাই এই প্রশ্নটি করে এবং যারা উত্তর দেয়, তারা একধরনের ইমোশন থেকে ব্যাপারটিকে ডিল করে। আমার স্টেটমেন্টটা একটু ভিন্ন। পৃথিবীর যেসব বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো আছে, ম্যাক্সিমামের সাথে তার প্রতিবেশি দেশের বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। যেমন রাশিয়া, রাশিয়ার বেশিরভাগ প্রতিবেশি দেশের সাথে তার সম্পর্ক ভালো না। আমেরকিার মতো সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশের সাথেও তার প্রতিবেশি দেশের বৈরী সম্পর্ক। এমকি চীনেরও তার প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট আছে। ইটস অ্যা ভেরি কমন ফেনোমেনা ইন গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড। এটা চলবেই। সুতরাং প্রতিবেশি দেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন-অবনয়ন মেনে নিয়েই এগোতে হবে। আরেকটা বিষয়, ভারত একটা বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিলো। কিন্তু দেখতে হবে, সেই সম্পর্কের ফলে বেনিফিশিয়ারি কে ছিলো, এই বেনিফিশিয়ারি স্টেটমেন্টও আমাদের দেখা উচিত। সেই সাথে দেখতে হবে, ভারতের আশেপাশে অন্যান্য যেসব রাষ্ট্র রয়েছে, তারা কি ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সুবিধা পেয়েছে? এই মূল্যায়ন করলে কিন্তু আমরা একটা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাবো। এসব বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হলো, মূলত আমরা ভারতের ক্রেতা। আমরা মাত্র ১.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করি ভারতে, আর ভারত ১২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে আমাদের দেশে। ফলে তাদের বেশি লয়াল থাকা উচিত আমাদের কাছে। তাদের এটা নিয়ে চিন্তা করার কথা। এটা স্বাভাবিক সেন্স থেকে বলা। তো এটা হচ্ছিলো না। এবং যেহেতু আমরা ক্রেতা, সেহেতু আমাদের জন্যে বিকল্প বের করা খুব কষ্টসাধ্য হবে না। তাছাড়া বর্তমান সরকার একটা রি-অ্যাক্টিভ ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে, যেটা হলো আমাদের পরিত্যক্ত পোর্টগুলো চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা আমাদের বাণিজ্যের জন্যে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

কিছুদিন আগে আমাদের এখানে বিনিয়োগ নিয়ে একটা বড়ো ধরনের সম্মেলন হয়েছে। আমাদের বর্তমান সরকার এটাকে অনেক প্রাধান্য দিচ্ছে। এই ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আবদুল্লাহ আল মামুন : এটা একটা রেগুলার ইভেন্ট। এটা বিশেষ কোনো ইভেন্ট না। বাংলাদেশে এ-ধরনের ইভেন্ট বিগত দিনে আরো বহু হয়েছে। এর থেকে বড়ো পরিসরেও হয়েছে। বড়ো কথা হলো, এখনো আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে আলাদা করে উপস্থাপন করতে পারিনি। আমাদের যে-ইকোনোমিক সেক্টর, সোশ্যাল সিকিউরিটি, বিজনেস ইনডেক্স— এসবে আমরা খুব বেশি উন্নতি করতে পারিনি। আমরা যে মানুষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমাদের দেশে ইনভেস্ট করতে, আমরা কি প্রস্তুত? আমার কি সেই আয়োজনটা আছে? সুতরাং আমি মনে করি, এই বিষয়টাকে এতো গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই, আবার গুরুত্বহীন করে দেখারও কিছু নেই। কিন্তু এতো এতো বিশৃঙ্খলার মধ্যে যে ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট এই ধারাবাহিকতাটা রক্ষা করেছে, সেজন্যে আমি তাদের বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই।

আপনি বিটিএমএ-র বর্তমান পরিচালক, আগে সহ-সভাপতি ছিলেন। অর্থাৎ টেক্সটাইল সংক্রান্ত কর্মতৎপরতার ভেতর আছেন। কিন্তু গত প্রায় দেড় দশক ধরে সুতার বাজার অস্থিরতার ভেতর আছে। আমাদের নরসিংদী, মাধবদী, শেখেরচর, নারায়ণগঞ্জ এই গোটা জোনটাই একদম সুতার উপর নির্ভরশীল। সুতা ছাড়া এখানকার সবই অচল। কিন্তু এই সংকটের আসলে নিরসন হচ্ছে না কেন? বড়ো ধরনের সিন্ডিকেট কি জড়িত? সরকার এখানে নজর দেয় না কেন?

আবদুল্লাহ আল মামুন : দেখেন, এটার জন্যে একটু মূলে যাওয়া দরকার। সুতা উৎপাদনের যে-প্রক্রিয়া, অর্থাৎ সুতার ফ্যাক্টরি করতে একটা লার্জ এমাউন্টের ইভেস্টমেন্ট প্রয়োজন। ফলে বিগত দুই যুগ আগেও আমাদের উদ্যোক্তাদের সেই সক্ষমতা ছিলো না। এমনকি ব্যাংকেরও ছিলো না। তারও আগে আমাদের দেশে তিন-চারটা পাকিস্তানি ফ্যাক্টরি ছিলো। মূলত আমাদের আমদানি করতে হতো। তবে আশার কথা হলো এই, গত দুই দশকে আমাদের স্থানীয় বাজারে বেশ কিছু সুতার মিল স্থাপিত হয়েছে। ফলে সুতার প্রাপ্যতা থেকে শুরু করে মূল্য নির্ধারণ পর্যন্ত আগের অব্যবস্থাপনাটা কমে এসেছে। আমি বলবো না যে, নাই হয়ে গেছে সংকট। আপনি তো শুধু সুতার কথাটা বললেন, বাংলাদেশে এমন কোনো কমোডিটি আছে, চাল-ডাল-তেল-পেঁয়াজ-নুন-কেরোসিন-পেট্রোল-ডিজেল, যেখানে অস্থিরতা নাই? সেই সাথে সুতাও কিন্তু আমাদের একটা কমোডিটি। আমাদের যাপিত জীবনে বস্ত্র নিত্য-নৈমিত্তিক একটা অনুষঙ্গ। ফলে এখানেও অস্থিরতা আছে। আমি মনে করি, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অস্থিরতা অনেকটা কমে গেছে। আশা করছি, আগামী দিনে বাংলাদেশের যদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঠিক হয়, তাহলে এসব আরো সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে। আপনি খেয়াল করেন, গত তিন বছরে গ্যাসের দাম তিনশো গুণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত দ্রব্যের দাম কিন্তু আমরা এতোটা বাড়াতে পারিনি। বিগত সরকারের আমলে চিনি, সয়াবিন তেলসহ এরকম আরো কিছু পণ্যে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হতো। সেক্ষেত্রে দেখা যেতো, দুয়েকটা বড়ো কোম্পানি সেসব পণ্য আমদানির সাথে জড়িত ছিলো। সকল পণ্যের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়। আরেকটা বিষয়, আগে যেটা হতো, তিন-চারজন উৎপাদক বা আমদানিকারক মিলে সিন্ডিকেট করতে পারতো, কেননা কেবলমাত্র সেই তিনজন বা চারজনই সুতার উৎপাদক বা আমদানিকারক ছিলো। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। সারা দেশে কমপক্ষে পাঁচ হাজারের উপর সাপ্লায়ার আছে, দেড় হাজারের বেশি সুতার মিল রয়েছে। সুতরাং দেড় হাজার মিল মালিক একসাথে সিন্ডিকেট করবে, এটা সম্ভব না।

তাহলে কারা মূল্য বৃদ্ধি করছে?

আবদুল্লাহ আল মামুন : আমি এবং আপনি ক্রেতা-বিক্রেতা, আমরা মূল্য নির্ধারণ করি না। অর্থনীতির ভাষায়, চাহিদা এবং যোগানের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারিত হয়।

আপনি থিওরিটিক্যালি একদম  সরলভাবে বিষয়টাকে ডিল করলেন। কিন্তু এখানে একটা বিরাট নৈরাজ্য চলছে। আপনি জানেন, টেক্সটাইল শিল্পের বহু লোক ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হইছে। সুতার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, সকালে যেই রেটটা ছিলো, বিকেলেই হয়তো পাঁচ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, এরকম সময়ও গিয়েছে। পরেরদিন আবার হয়তো দশ টাকা বেড়ে গেছে। এখনো এমন হচ্ছে। এটা একধরনের নৈরাজ্য বলে আমি মনে করি। এই ব্যাপারগুলো প্রপারলি ডিল হচ্ছে না কেন?

আবদুল্লাহ আল মামুন : আমি কিন্তু আগেই বলেছি যে, সুতার বাজারের অস্থিরতা কমে নাই। আপনি যদি স্ট্যাটিস্টিক্স দেখেন, দেখবেন, গত পাঁচ বছরে সুতার দাম, ধরেন ১০০ টাকার সুতার দাম ১০% রেঞ্জে ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকার মধ্যে উঠা-নামা করেছে। আরেকটা বিষয় মানতে হবে, সুতার বাজার নির্ভর করে তুলার বাজারের উপরে। তুলা কিন্তু আমাদের এখানে উৎপাদিত হয় না। ফলে তুলা আমদানি করে উৎপাদন খরচ এবং শ্রমমজুরি দিয়ে মিল মালিকদের তেমন কিছু করার থাকে না। আমি সরাসরি সুতা উৎপাদনের সাথে যুক্ত না থাকলেও তাদের গল্পগুলো জানি। আবার ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট ৯% থেকে বেড়ে ১৫% হয়েছে। সুতার বাজারের অস্থিরতা অবশ্যই কমানো দরকার। তবে সবগুলো বিষয় মাথায় নিয়ে সেটা করতে হবে। আমি প্রস্তাব করেছিলাম, সুতার গায়ে যেন দাম লেখা থাকে, ফ্যাক্টরির নাম, উৎপাদন তারিখ দেয়া থাকে— এভাবে সবার কথা বিবেচনায় রেখে ব্যবস্থাটা করা উচিত। আমার শেষ কথা হলো, বিগত দিনের তুলনায় এখন অস্থিরতা অনেক কমেছে। সেটা আরো কমানো যাবে। এক্ষেত্রে কিছু বিধিমালা প্রণয়ন এবং তার সরাসরি প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

আচ্ছা, শেষ প্রশ্নে যেতে চাই। সেটা হলো, নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিতে তিন মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন আপনি। আপনি নরসিংদী চেম্বারের একজন একনিষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তো এবার চেম্বারের পরিচালনা পরিষদের যে-বডি গঠিত হলো, সেখানে স্মরণকালের সবচে’ বেশি রাজনৈতিক প্রভাব দেখা গেছে বলে সকলেই মনে করছেন। সেই সাথে চতুর্দিকে একটা নির্বাচনী আমেজ ছিলো। আপনিও নির্বাচনী তৎপরতার ভেতর ছিলেন বলেই জানতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। সব কিছু মিলিয়ে চেম্বার কি নরসিংদীর ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে ইতিবাচক জায়গায় দাঁড়াতে পারলো? আপনার পর্যবেক্ষণ কী এই বিষয়ে?

আবদুল্লাহ আল মামুন : এই বিষয়ে আমার বক্তব্য দেয়াটা একটু বিব্রতকর। একটা বিষয় আপনি জানেন যে, আমি নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ছিলাম আরো প্রায় ছয়-সাত বছর আগে। আবার আমি টেক্সটাইল এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলাম, এখন ডিরেক্টর হিসেবে আছি। সেই বাস্তবতায়, সেখান থেকে ফিরে এসে নরসিংদী চেম্বারের দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ আমার ছিলো না। এবং আমার ইচ্ছাও ছিলো না। কিন্তু নরসিংদীর সাধারণ ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে আমাকে চেম্বারের দায়িত্ব নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা চাইছিলো, বর্তমান পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমি যেন ইন্টেরিম হিসেবে হলেও দায়িত্বটা নিই। ফলে আলোচনাটা ছিলো। এটা নিয়ে আমি খুব দোদুল্যমান ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। কিন্তু এসবের ভেতর দিয়ে যেটা ঘটে গেলো, সেটা আমিও দেখেছি, আপনারাও দেখেছেন। তাই এই বিষয়ে এর বেশি বলাটাকে আমি আমার জন্যে বিব্রতকর মনে করছি। তবে আমি মনে করি, নরসিংদী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের তীর্থস্থান। সুতরাং এখানে যারাই চেম্বার অব কমার্সের দায়িত্ব নেবে, তাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। পাশাপাশি তাদের একটা সাকসেস স্টোরি থাকতে হবে, ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত জীবনে। দ্যান তারা একটা এসোসিয়েশনকে সাকসেসফুল করতে পারবে।

এটা কি আছে তাদের?

আবদুল্লাহ আল মামুন : সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন, নরসিংদীর ব্যবসায়ীরা বিবেচনা করবে। সবচে’ বড়ো বিষয় হলো, ব্যবসায়ীদের যারা নেতা, তাদের সর্বপ্রথম ক্রাইটেরিয়াই তো তাদের ভালো ব্যবসায়ী হতে হবে। তারা সাকসেসফুল বিজনেসম্যান কি না, এটাও তো দেখার বিষয়। আমি মনে করি, আমি যদি আমার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক জীবনে সফল হতে না পারি, আমার কোনো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা যদি সফল না হয়, আমার যদি কোনো ভিশন না থাকে, তাহলে আমি সারা জেলার ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব নেবো কীভাবে?

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ