সুন্দর আলী গান্ধী : স্থানীয় ইতিহাসে অনুচ্চারিত এক স্বদেশি চরিত্র

প্রায় ১৪০ বছরের প্রাচীন রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেস (প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর)। ভারতবর্ষের অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষী হয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি এখনো সগর্বে টিকে আছে। দেশভাগের আগে স্বাধীনতার মূল নেতৃত্ব দিয়ে দলটি ইতিহাসে অমর অধ্যায় রচনা করেছে। দলটি সৃষ্টি করেছে অসংখ্য কীর্তিমান রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, যারা যুগ যুগ ধরে দেশকে সমৃদ্ধ ও বিনির্মাণ করে গেছেন। তেমন একজন নিবেদিতপ্রাণ কংগ্রেস নেতা ছিলেন ঢাকার পূর্বাঞ্চল হিসেবে খ্যাত নরসিংদীর সুন্দর আলী মিঞা (১৮৮২-১৯৪৭)। রাজনৈতিক জীবনে অহিংস, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক গুণের অধিকারী হওয়ায় এবং মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক মতাদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়ায় তৎকালীন গণমানুষের কাছ থেকে ‘গান্ধী’ খেতাব পেয়েছিলেন। এই কারণে তিনি সুন্দর আলী গান্ধী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

মহাত্মা গান্ধীর ডাকে বিদেশি পণ্য বর্জন আন্দোলনে ঢাকা পূর্বাঞ্চলে সুন্দর আলী গান্ধীর নেতৃত্ব ছিলো আশা জাগানিয়া। তিনি মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, শরৎচন্দ্র বসু, অনুশীলন সমিতির নেতা মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, সতীশচন্দ্র পাকড়াশী, কৃষক নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, সাটিরপাড়ার জমিদার কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় নেতা ললিতমোহন রায় প্রমুখের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তাঁতশিল্পের পীঠস্থান নরসিংদী- নারায়ণগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-গাজীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় কংগ্রেসের রাজনীতি ছড়িয়ে দেন। তিনি স্থানীয় মুসলমান ও হিন্দুদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন, যার কারণে তিনি ‘গান্ধী’ খেতাবের পাশাপাশি হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন ও বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক দিলে তিনি দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বস্ত্রশিল্প অধ্যুষিত মাধবদী, শেখেরচর, নরসিংদী, হাসনাবাদ প্রভৃতি এলাকায় তাঁতিদের সংগঠিত করে দেশি তাঁত গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। তখন মাধবদী-শেখেরচরে অনেক বিলেতি তাঁতের আবির্ভাব হয়েছিলো। বাজারে বিলেতি কাপড়ের চাহিদা ছিলো বেশ। তাই সাধারণ মানুষদের কাছে দেশি কাপড় ও দেশি খটখটি তাঁতযন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্যে প্রচারণা, পথসভা ও জনসভা করার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। মাধবদী, বাবুরহাট, শেখেরচর, হাসনাবাদ ও নরসিংদী শহরে তিনি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিলি করে দেশি পণ্য ব্যবহার ও বিলেতি পণ্য পরিহারের জন্যে অনেক প্রচারণা চালান।

নরসিংদী ও শেখেরচরের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তখন দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট ছিলো মাধবদীতে, যা মাধবদীর জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে বসতো। সেই হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের জমিদারকে উচ্চহারে খাজনা দিতে হতো। প্রতিবছর জমিদারি খাজনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা বাবুরহাটের কাপড় ব্যবসায়ীদের খাজনা বৃদ্ধি করতেন। অনেক সময় জমিদারের পাইক-বরকন্দাজরা খারাপ ব্যবহার করতো। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে বাবুরহাট নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের কোন্দল শুরু হয়। প্রভাবশালী, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও তালুকদার শ্রেণি মাধবদীর জমিদারদের পক্ষে অবস্থান নেয়। তখন এলাকার সাধারণ তাঁতি ও খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে অবস্থান নেন কংগ্রেস নেতা সুন্দর আলী গান্ধী, করিমপুরের সেকান্দর আলী মাস্টার ও জিনারদীর বিজয় চ্যাটার্জী প্রমুখ। সেই সময় তাঁদের পরামর্শদাতা হিসেবে আধ্যাত্মিক পীর ইমামউদ্দিন এগিয়ে আসেন। তিনি ছিলেন সুন্দর আলী গান্ধীর পীর। তিনি পরামর্শ দেন, যেহেতু কাপড় ব্যবসায়ী ও তাঁতিদের সিংহভাগই মুসলমান, তাই তাদের হিন্দু জমিদারদের অধীনে হাট করার দরকার নেই। তাদের জন্যে আলাদা একটা কাপড়ের হাট বসালে ভালো হয়। কথাটি সুন্দর আলী গান্ধীর মনে ধরে। তাই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি সেখানে কংগ্রেসের শ্রমিক ফ্রন্ট গড়ে তোলার জন্যে প্রথমে একটি তাঁতি শ্রমিক সমিতি গড়ে তোলেন। এই সমিতি তখন বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। সিদ্ধান্ত হয়, মাধবদীর অদূরে শেখেরচর প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বাঁকমোড়া নামক স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি কাপড়ের হাট বসানো হবে। এবং উক্ত হাটে কোনো তাঁতি ও ব্যবসায়ীদের খাজনা দিতে হবে না। বিনা খরচে ব্যবসা করার লোভে তখন অনেক তাঁতি-ব্যবসায়ী মাধবদী বাবুর বাড়ির পরিবর্তে শেখেরচর বাঁকমোড়ায় ভিড় করতে থাকেন। খুব সহজে খোলা মাঠে জমে ওঠে কাপড়ের হাট। তখন উৎসাহী কিছু মানুষ হাটটির নামকরণ করেন সুন্দর আলী গান্ধীর পীর ইমামউদ্দিনের নামানুসারে— ‘ইমামগঞ্জ বাজার’। তবে সেটা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। এক পর্যায়ে কাপড়ের হাটটি শেখেরচর হাট হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে দূর-দূরান্তের লোকজন শেখেরচর হাটকে বাবুরহাট হিসেবেই আখ্যায়িত করে থাকে। বর্তমানে কাপড়ের হাটটি দেশের বৃহৎ হিসেবে প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। হাটটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্থানীয় তালুকদার হলধর সাহা ও বালাপুরের জমিদার কালীমোহন সাহা সহযোগিতা করেন।

সুন্দর আলী গান্ধী সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিক, মজুর, তাঁতি ও জেলে শ্রেণির স্বার্থ দেখে গেছেন আমৃত্যু। তাদের জন্যে তিনি অনেক জনহিতকর কাজ করে এখনো অমর হয়ে আছেন। কংগ্রেসের রাজনীতি করতে গিয়ে তাঁকে প্রায় জমিদার শ্রেণির বিরুদ্ধাচারণ করতে হতো। কারণ জমিদার শ্রেণি ছিলো ব্রিটিশদের দোসর এবং স্বাধীনতা বিরোধী। ব্রিটিশদেরকে এদেশে বহাল রাখতে পারলে তাদের জমিদারি টিকিয়ে রেখে প্রজাদের শোষণ করা যাবে। অপরদিকে কংগ্রেসের নেতা হিসেবে সুন্দর আলী গান্ধীর চিরকামনা ছিলো দেশের স্বাধীনতা। ব্রিটিশরাজকে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া ছাড়া দেশের মানুষের কোনো মুক্তি নেই। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন সাটিরপাড়ার জমিদার ললিতমোহন রায় বিএবিএল। তিনি জমিদার হলেও নিজে ছিলেন অনুশীলন সমিতির পৃষ্ঠপোষক। বিপ্লবীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। নিজে ছিলেন নেতাজী সুভাষ বসুর ঘনিষ্ঠ সহচর। সঙ্গত কারণে তিনি সুন্দর আলী গান্ধীর প্রতি সমর্থন দিয়ে গেছেন। তাছাড়া ললিতমোহনের আইনপেশা ও রাজনীতি বিস্তৃত ছিলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কলকাতা পর্যন্ত। তাই নরসিংদী অঞ্চলের কংগ্রেস রাজনীতি তিনি সুন্দর আলী গান্ধী, সেকান্দর আলী মাস্টার ও বিজয় চ্যাটার্জী প্রমুখের মতো নেতাদের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। শিক্ষাব্রতী ও সমাজ সংস্কারক ললিতমোহন স্থানীয় রাজনীতিতে নাক গলাতেন না। জমিদার হয়েও তিনি গণমানুষের কাতারে নেমে এসেছিলেন। জাতপাত রেওয়াজ ভাঙার জন্যে তিনি জমিদার হয়েও নরসিংদী বাজারের মেথরদের জমিদার বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে একই থালায় খাবার খেতেন। তাঁর মতো সুন্দর আলী গান্ধীও সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন। এসব খেটে খাওয়া মানুষজনই সুন্দর আলী মিঞাকে সম্মানজনক খেতাব দিয়েছিলেন ‘গান্ধী’ হিসেবে।

তাঁর কিছু অমর কীর্তি এখনো নরসিংদীবাসীর অন্তরে চিরজাগ্রত রয়েছে। তিনি এলাকাবাসীর ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্যে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যার সূচনা হয়েছিলো ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে, মাইনর স্কুল হিসেবে। খাতাপত্রে ‘নরসিংদী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’ হিসেবে থাকলেও মানুষের মুখে মুখে স্কুলটির নাম ‘গান্ধী স্কুল’ নামে পরিচিত। মেঘনা নদীর তীরবর্তী স্কুলটি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্ম দিয়েছে। প্রায় ৫ একর জমি দান করেছিলেন স্কুলের জন্যে। একসময় সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নরসিংদী পাইলট স্কুল চলতো। অনেক গরীব ছাত্র নরসিংদী শহরের বিভিন্ন বাড়িতে লজিং থেকে উক্ত স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। উক্ত স্কুল ছাড়াও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁর নেতৃত্বে নরসিংদী শহরে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে একটি জাতীয় কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, যার অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়েছিলেন ড. সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। উক্ত জাতীয় কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন প্রখ্যাত বিপ্লবী সতীশ পাকড়াশী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বাংলায় এক মহাদুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

মূলত যুদ্ধের কারণে খাদ্যশস্যের পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হলে মজুতদারি ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। তখন সুন্দর আলী গান্ধী নরসিংদী বাজারে অনেক চাল-ডালের আড়ত অনাহারী মানুষের জন্যে খুলে দিয়েছিলেন। তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিবর্গের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে অনাহারী মানুষের মুখে তুলে দিয়েছিলেন। বেশকিছু লঙ্গরখানা খুলে মানুষের জন্যে খাবার নিশ্চিত করেছিলেন। সে-সময় অনাহারে অনেক মানুষ মরে বাংলার পথে-ঘাটে পড়ে থাকতো। কিন্তু তাঁর সময়োপযুক্ত পদক্ষেপের কারণে নরসিংদীবাসী দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলো। তাঁর এই মানবিক অবদানের কথা এলাকাবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছে।

কংগ্রেস রাজনীতির সক্রিয় নেতা হওয়ায় সর্বভারতীয় অনেক নেতা সুন্দর আলী গান্ধীকে পছন্দ করতেন। এঁদের কেউ কেউ তাঁর বাড়িতে এসে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে রাত্রিযাপনের পর অতিথিরা মেঘনা নদীতে নৈশবিহার করতেন। কেউ কেউ বৈকালিক ভ্রমণও করতেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ডা. রাজেন্দ্র প্রসাদ, মওলানা আজাদ, ড. আচার্য কৃপালানী, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বিভিন্ন সময়ে নরসিংদী এসেছেন। তাঁদের সভা করার জন্যে তিনি মেঘনার তীরবর্তী স্থানে একটি বড়ো ময়দান তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে সেখানেই নরসিংদীর বড়ো বড়ো রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধুর মতো খ্যাতিমান নেতারা সেই ময়দানে জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এটি স্থানীয়ভাবে ‘গান্ধী মাঠ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মাঠের পাশে একটি কবরস্থান, পাবলিক টয়লেট এবং একটি বড়ো পাকা মসজিদ স্থাপন করেন সুন্দর আলী গান্ধী। মসজিদটি মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এসব স্থাপনা দর্শনার্থীদের কাছে আকষর্ণীয় হয়ে ওঠেছে।

সুন্দর আলী গান্ধী মনে-প্রাণে একজন নরসিংদীপ্রেমী ছিলেন। জন্মস্থানের প্রতি তাঁর অপার ভালোবাসা প্রতিটি কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি নরসিংদীকে একটি মহকুমা শহর হিসেবে গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই বছর এক সরকারি সফরে নরসিংদী এসেছিলেন বাংলার ছোটোলাট। তিনি স্টিমারযোগে কলকাতা থেকে প্রথমে ঢাকায়, পরে মেঘনা নদী ধরে নরসিংদী এসে গান্ধী মাঠের ঘাটে নোঙর করেন। পরে সুন্দর আলী গান্ধীর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। তখন ছোটোলাটের সম্মানে নরসিংদীতে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। সেই সভায় তিনি ছোটোলাটের কাছে নরসিংদী থানাকে মহকুমায় রূপান্তর করার দাবি জানান। সে-দাবি মেনেছিলেনও ছোটোলাট। কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হওয়ায় এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের কারণে তাঁর সেই দাবি বাস্তবে রূপদান করতে পারেননি। তাঁর স্বপ্নের সেই নরসিংদী মহকুমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে, যা জেলা হিসেবে রূপান্তরিত হয় ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। দুঃখজনক বিষয় হলো, ব্রিটিশ বিতাড়নের জন্যে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু সেই স্বাধীনতা তিনি দেখে যেতে পারেননি। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের কয়েক মাস পূর্বে ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলার এক অভিজাত ও ধনাঢ্য পরিবারে সুন্দর আলী গান্ধীর জন্ম ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল, মসজিদ, ঈদগাহের পাশের কবরস্থানে তিনি সমাহিত হন। তাঁর পূর্বপুরুষের বাস ছিলো ঐতিহাসিক সোনারগাঁও। সুলতানদের রাজধানী মোগড়াপাড়ায় বসবাস করার সময় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হয়। দেশি সেনা হিসেবে আবরার খাঁ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সঙ্গত কারণে তিনি বিচারের সম্মুখীন হন। সেই বিচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে তিনি মোগড়াপাড়া থেকে পালিয়ে নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চল নবীপুরের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে নবীপুরে জনবসতি গড়ে ওঠতে থাকে। সেখানে আবরার খাঁ ও তাঁর দুই পুত্র হাজী কলিম খাঁ ও হাজী কেরামত আলী পাটের ব্যবসা শুরু করেন। ইতোমধ্যে মেঘনা ও হাড়িধোয়া নদীর তীরবর্তী থানা রোড ও হাজীপুরে ব্রিটিশ, গ্রিক ও আরমেনীয় পাট ব্যবসায়ীদের অনেক গোডাউন গড়ে ওঠেছে। স্থানীয়ভাবে তারা পাট কিনে নৌ-যোগে কলকাতায় রপ্তানি করতেন। তাদের গোডাউনে পাট সরবরাহ করে পিতা-পুত্রদ্বয় আর্থিকভাবে বেশ উন্নতি করেন। এক পর্যায়ে তাঁরা মেঘনা নদীর তীরবর্তী দত্তপাড়ায় বসতি স্থাপন করে পাটের আড়তদারি শুরু করেন। হাজী কলিম ছিলেন নিঃসন্তান। হাজী কেরামত আলীর চার সন্তানের মধ্যে সুন্দর আলী গান্ধী ছিলেন তৃতীয়। প্রথম ছিলেন হাফিজ উদ্দিন বেপারী, দ্বিতীয় হলেন আবদুল হামিদ বেপারী ও সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন বেলায়েত হোসেন মাস্টার। তাঁদের বাবা ও চাচা শুধু পাটের ব্যবসাই নয়, বিভিন্ন তৈজসপত্র ও খাদ্যশস্য নৌকাযোগে কলকাতা থেকে নরসিংদী বাজারে এনে বিক্রি করে অনেক টাকা-পয়সা আয় করেছিলেন। তখনকার সময় নরসিংদী বাজারে হিন্দু সাহা উপাধিধারী ব্যবসায়ীদের একচ্ছত্র রাজত্ব ছিলো। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাজী কলিম ও কেরামত আলী ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। তাঁদের উত্তরসুরীদের কেউ কেউ নামের শেষে বেপারী লিখতে শুরু করেন। সেই সূত্রে তাঁদের বসতিস্থল দত্তপাড়াকে কেউ কেউ বেপারীপাড়া হিসেবে অভিহিত করতেন। শুধু হাজী কলিম ও কেরামত আলীই নয়, তাঁদের মতো আরো কিছু পরিবার দত্তপাড়ায় বসতি স্থাপন শুরু করলে পুরো মহল্লাটি বেপারীপাড়া হয়ে ওঠে। বেপারীপাড়ার পাশে কয়েকটি তেল্লী পরিবার বাস করতো। তারা তৈল পেশার কাজ করতেন।

ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায়, সুন্দর আলী গান্ধীর ঊর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষ বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড় থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও বসতি স্থাপন করেছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবরার খাঁ সোনারগাঁও থেকে চরের দেলোয়ারপুর মৌজায় নবীপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তখন পুরো এলাকায় নীল চাষের ব্যাপক প্রচলন। কৃষকদেরকে জোরপূর্বক নীল চাষ করতে বাধ্য করতো নীলকররা। তেমন কয়েকটি নীলকুঠি ছিলো মেঘনার তীরবর্তী ভঙ্গারচর, মাহমুদাবাদ (নারায়ণপুর) ও শীতলক্ষ্যার তীরের ডাঙ্গা এলাকায়। রাসায়নিক রঙ আবিষ্কার হলে নীলের চাষাবাদ লোপ পায়। তখন সোনালি আঁশ হয়ে ওঠে পাট। পাটের ব্যাপক উৎপাদন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সুন্দর আলী গান্ধীর পরিবারেরও উত্থান শুরু হয়।

তাঁদের পরিবারের সবচেয়ে খ্যাতিমান পুরুষ ছিলেন সুন্দর আলী গান্ধী। তবে একাডেমিক শিক্ষার চেয়ে তিনি স্বশিক্ষা আর বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় একজন মহান মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। মক্তব শেষ করে পিতার ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে তিনি কংগ্রেস রাজনীতিতে একজন সাচ্চা মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। বাবা হাজী কেরামত আলী ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত পণ্ডিত মানুষ। ফারসি, উর্দু, আরবি, বাংলা ও সংস্কৃতে তিনি পারদর্শী ছিলেন। তিনি যখন ব্যবসায়ের কাজে কলকাতা-করাচি যেতেন, তখন অনর্গল ফারসি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় কথা বলতেন। কোনো আরবের সঙ্গে সাক্ষাত হলে আরবি ভাষায় কথা বলতেন। বাবার এসব গুণ প্রসারিত হয়েছিলো সুন্দর আলী গান্ধীর মধ্যে। তিনি পিতার ব্যবসা সামলেও রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন। পরিণত বয়সে তিনি দত্তপাড়া নিবাসী লালমোহন ভূঁইয়ার কন্যা মির্জা বানু বিবিকে বিয়ে করেন। মির্জা বানু ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ ভূঁইয়ার বোন।

সুন্দর আলী গান্ধীর সর্বকনিষ্ঠ ভাই বেলায়েত হোসেন মাস্টার ছিলেন একাডেমিকভাবে উচ্চশিক্ষিত মানুষ। মাত্র ৩ বছর বয়সে মাতৃহীন হলে ২০ বছর বয়সী সুন্দর আলী ভাইয়ের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বেলায়েত হোসেনের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর। তিনি সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউট থেকে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। তখন তিনি ঐতিহাসিক বেকার হোস্টেলে থাকতেন। তিনি সরকারি কোনো চাকুরি গ্রহণ না করে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্যবসায় মনোযোগ দেন এবং বিশেষ উন্নতি সাধন করেন।

পিতার মতো তিনিও সমাজসেবা, কুসংস্কার নিরোধ, অসাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড, নরসিংদীর উন্নয়ন ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে অমরত্ব লাভ করেন। তাঁর অসংখ্য অমর কীর্তির মধ্যে নরসিংদী সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা ছিলো অন্যতম। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল এক ঐতিহাসিক সভায় নারায়ণগঞ্জের এসডিও এস এইচ কোরাইশী কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্যে যে ১৪ জনের কমিটি গঠন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেলায়েত হোসেন মাস্টার, স্থানীয় জমিদার ও কলেজের জমিদাতা জিতেন্দ্র কিশোর মৌলিক, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন, আফছার উদ্দিন সরকার প্রমুখ ছিলেন অন্যতম। তাছাড়া বেলায়েত হোসেন মাস্টার নরসিংদী কলেজের সহ-সভাপতি, নরসিংদী বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি, নরসিংদী পাট ও চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, ঋণ ও শালিসী বোর্ডের সদস্য, জুড়ি বোর্ডের মেম্বার, নরসিংদী ফায়ার ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। শেখেরচর কাপড়ের হাট প্রতিষ্ঠায় সুন্দর আলী গান্ধীর সহযোগী, নরসিংদী সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এলাকার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বেলায়েত হোসেন মাস্টার অত্যন্ত সুদর্শন ও রুচিশীল ব্যক্তি ছিলেন। দিনে দুইবার দাঁড়ি কামাতেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অন্তঃপ্রাণ ছিলেন। কলকাতা থেকে অনেক বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা এনে পড়তেন। তাঁর ঠিকানায় নিয়মিত আসতো আনন্দবাজার, দি স্টেটসম্যান, সওগাত, মোহাম্মদী, চতুরঙ্গ, ভারতবর্ষ ও মানসী পত্রিকা। তিনি অত্যন্ত চমৎকার ইংরেজি লিখতে ও বলতে পারতেন। তাঁর আরেকটি অনন্য কীর্তি ছিলো নরসিংদী দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করা। পুুরান লঞ্চঘােেট ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বামাসুন্দরী দাস্যা তাঁর প্রয়াত স্বামী কার্তিক চন্দ্র সাহার স্মৃতি রক্ষার্থে ১,০০০ টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করলে তার সভাপতি ও পরিচালনার ভার পড়ে বেলায়েত হোসেন মাস্টারের উপর। তাঁর এক ছেলে শাহাদাৎ হোসেন মন্টু বাবার মতো বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ুয়া মানুষ। জ্যাঠা সুন্দর আলী গান্ধী ও বাবা বেলায়েত হোসেন মাস্টারের পথ ধরে তিনিও ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক উন্নতি করেছেন। তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন ডিগ্রি গ্রহণ করেন। কোনো চাকুরিবৃত্তি গ্রহণ না করে তিনিও পারিবারিক ঐতিহ্যে ব্যবসায় নিয়োজিত হন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট এন্ড কমার্স ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন গান্ধী স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কবি ইকবালের ‘দ্য রিকনস্ট্রাকশন অব রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম’, স্যার এডউইন আর্নল্ডের ‘পার্লস অব দ্য ফেইথ অর ইসলামস রোজারি’ ও স্যার থমাস কার্লাইলের ‘মোহাম্মদ দ্য হিরো এজ প্রফেট’ বঙ্গানুবাদ করে খ্যাতি অর্জন করেন। আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ইতালি, উজবেকিস্তান, রোমানিয়া, গ্রিস, বুলগেরিয়াসহ অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি বিদেশ থেকে দামি পারফিউম, স্যুট-প্যান্টের পরিবর্তে লাগেজ ভর্তি করে ইংরেজি ভাষার দুষ্প্রাপ্য ও মহামূল্যবান বই-পুস্তক নিয়ে আসতেন।

সুন্দর আলী গান্ধীর পুত্রদের মধ্যে সবচেয়ে তেজস্বী পুরুষ ছিলেন মিঞা আবদুল মজিদ। দ্বিতীয় পুত্র মিঞা আবদুল অহিদ, তৃতীয় পুত্র আবদুস শহীদ ও চতুর্থ পুত্র মিঞা রেজাই করিম খসরু। তারা ব্যবসায়ী হিসেবে নরসিংদীতে খ্যাতিমান হয়েছেন। আবদুস শহীদ নরসিংদী পৌরসভার কাউন্সিলর হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিঞা রেজাই করিম নরসিংদী পাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি, নরসিংদী পাট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঈদগাহ কমিটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পিতার আদর্শ উজ্জীবিত রেখেছিলেন। জমিদার ললিতমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত কমল কামিনী গার্লস স্কুলটি দেশভাগের পূর্বকালে বন্ধ হয়ে যায়। এতে নরসিংদীর নারীশিক্ষায় প্রচণ্ড ছেদ পড়ে। এটা গান্ধী পরিবারের বিদ্যোৎসাহী সদস্যদের বেশ মর্মপীড়া দেয়। তাঁদের পক্ষ হয়ে মিঞা আবদুল মজিদ গার্লস স্কুলটি পুনর্জীবিত করার উদ্যোগ নেন। তিনি চাচা বেলায়েত হোসেন মাস্টারকে স্কুলের সভাপতি করেন। তাঁদের উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা হয়। কর্মজীবীদের উৎসাহ দেয়ার জন্যে সকাল ছয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত প্রাতঃকালীন ব্যবস্থা চালু করেন। উক্ত স্কুলটি পরবর্তীতে কমল কামিনী গার্লস স্কুলের পরিবর্তে সাটিরপাড়া বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করা হয়। বর্তমানে স্কুলটি সাটিরপাড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

সুন্দর আলী গান্ধীর পুরো পরিবার একটি অসাম্প্রদায়িক পরিবার ছিলো। নরসিংদীর রামদাস বাউলের আখড়া তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে যুগ যুগ ধরে। প্রতিবছর সেখানে যে-বাউলমেলা হয়, তাতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বেলায়েত হোসেন মাস্টার। তিনি সেখানে বাউল সঙ্গীতের সঙ্গে এসরাজ সংগত করতেন। সুন্দর আলী গান্ধী ছিলেন বাউল আখড়ার একজন ভক্ত। জ্যাঠা সুন্দর আলী গান্ধী সম্পর্কে ভাতিজা শাহাদাৎ হোসেন মন্টু জানান, “সুন্দর আলী গান্ধী ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের চেহারার সঙ্গে কোকড়ানো চুল, খাড়া নাসিকা, প্রশস্ত ললাট ও জ্যোতির্ময় চোখ দেখে যেকোনো মানুষ আকর্ষিত হতেন। খদ্দরের পাঞ্জাবি, নিমা ও লুঙ্গি পরতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। স্বদেশি পোশাক পরে মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি মনে-প্রাণে ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক ও মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।” কিন্তু অবাক কাণ্ড হলো, এই মহান রাজনীতিক ও আধুনিক নরসিংদীর বিনির্মাণকারীর কোনো মূল্যায়ন নরসিংদীবাসী করেনি। তিনি দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি, সমাজ গঠন ও রাজনীতিতে বিরল উদাহরণ হলেও স্থানীয়ভাবে তাঁর কোনো স্মৃতি গড়ে তোলা হয়নি। তাঁর নামে কোনো রাস্তা, মিলনায়তন কিংবা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়নি। তাই নরসিংদী পুরান বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরান থানার ঘাট পর্যন্ত রাস্তাটির নাম যদি ‘সুন্দর আলী গান্ধী সড়ক’ করা হয়, তাহলে এই মহর্ষি মানুষটির প্রতি সামান্য হলেও সম্মান জানানো সম্ভব হবে। নরসিংদী পৌরসভা এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।


আপেল মাহমুদ
সাংবাদিক, গবেষক ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগ্রাহক

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ